ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

১৮ বছরেও শেষ হয়নি ব্রিজ নির্মাণের কাজ!

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২০
১৮ বছরেও শেষ হয়নি ব্রিজ নির্মাণের কাজ!

সাতক্ষীরা: ব্রিজ নির্মাণের লক্ষ্যে কংক্রিটের পিলার উঠেছিলো কপোতাক্ষ নদের কপিলমুনি-কানাইদিয়া পয়েন্টে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে দীর্ঘ ১৮ বছরেও শেষ হয়নি ব্রিজ নির্মাণের কাজ।

মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পিলারগুলো এখন সাতক্ষীরার তালা উপজেলা ও খুলনার পাইকগাছার লাখো মানুষের হতাশার কারণ হয়েছে। আদৌও এই ব্রিজ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান এলাকাবাসী।

শুধু তাই নয়, সাতক্ষীরা-খুলনার লাখো মানুষের স্বপ্নের এই ব্রিজ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় দুই জেলার মানুষ এখন বাঁশের তৈরি সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন কপোতাক্ষ নদ। গতিহীন হয়ে পড়েছে এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য।  

উৎপাদিত ফসলও সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারছেন না তারা। মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়েই পার করতে বাধ্য হচ্ছে মোটরসাইকেল ও মালবোঝাই ভ্যান। এতে ইতোমধ্যে অনেকেই হয়েছেন দুর্ঘটনার শিকার।

ব্রিজ নির্মাণের কংক্রিটের পিলার

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা জোরালো করার লক্ষ্যে কপোতাক্ষ নদের ওপর কপিলমুনি-কানাইদিয়া পয়েন্টে ব্রিজ নির্মাণের লক্ষ্যে সরকার এক কোটি ৯৩ লাখ ৪২ হাজার ৯শ ১৯ টাকা ৫৫ পয়সা বরাদ্দ দেয়। কাজের মান উন্নয়নের জন্য পরে বাজেট বাড়িয়ে করা হয় দু’কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এন হক অ্যাসোসিয়েট নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০০০ সালে এই ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করে। ’০৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত আংশিক কাজ করে খুলনার একটি ব্যাংকের শাখা থেকে এক কোটি ৬৭ লাখ ৭২২ টাকা বিল উত্তোলন করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।  

এ বিষয়ে খুলনা মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে মামলা জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে সেতু নির্মাণ কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সেতুটির বাকি নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে পরে ইসলাম গ্রুপ নামে আরেকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শুরু করলেও মন্ত্রণালয়ে ব্রিজ নির্মিত হলে কপোতাক্ষ নদের স্রোতের বাধা পড়বে মর্মে একটি চিঠি দেয় সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর ব্রিজ নির্মাণ কাজ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক আজিজুর রহমান বলেন, বয়স হয়েছে, বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে ভয় লাগে। অনেকেই মোটরসাইকেল নিয়ে নদীতে পড়ে আহত হয়েছেন। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওপারে যেতে হয়।

বাঁশের সাঁকো।  ছবি: বাংলানিউজ

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজু জানায়, সাঁকো দিয়ে পার হতে গেলে সেটি নড়চড়া করে, পার হয়ে স্কুলে যেতে ভয় লাগে।

কপিলমুনির ব্যবসায়ী পলাশ কর্মকার বলেন, ব্রিজটি নির্মিত না হওয়ায় নানাভাবেই পিছিয়ে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনি বাজার। এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা এক কথায় অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছি আমরা।

তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আনারুল হক বলেন, কপোতাক্ষ নদের ওপারে কপিলমুনি খুলনার একটি বড় বাণিজ্য কেন্দ্র। আমাদের উপজেলায় উৎপাদিত কৃষি ফসলের একটি বড় অংশ কপিলমুনি বাজারে বিক্রি হয়। ব্রিজের অভাবে উৎপাদিত ফসল ওপারে নিয়ে যেতে দুর্ভোগে পড়তে হয়। বাঁশের সাঁকো দিয়ে মালবোঝাই ভ্যান পার করা কঠিন হয়ে পড়ে। সব জটিলতা কাটিয়ে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে এলাকাবাসী খুবই উপকৃত হবেন।  

জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বাংলানিউজকে বলেন, কানাইদিয়া-কপিলমুনি পয়েন্টে ব্রিজ নির্মিত হলে দু’জেলার মানুষই বেশ উপকৃত হতো। কাজ শুরু হলেও দীর্ঘ ১৮ বছরে তা শেষ হয়নি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।