সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিবনাথপুর গ্রামের শাহ আলী একসময় পাটকলের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। পাটকল বন্ধ হয়ে গেলে তিনি সংসার চালাতে দিন মজুরির পেশা বেছে নেন।
ফুল চাষের জন্য এখন নিজেই জমি কিনেছেন। এছাড়াও বন্ধকী নেওয়া জমির পরিমাণও বেড়েছে। এসব জমিতে নানা রঙ-বেরঙের ফুল ও ফুলের চারা চাষ করেন তিনি। এখন ভালবাসা দিবস বা বসন্ত উৎসব থেকে শুরু করে মাতৃভাষা দিবসসহ সব দিবসই তার মুখস্ত থাকে। কারণ এসব দিবসে তার ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে শিবনাথপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় শাহ আলীর সঙ্গে।
তিনি বলেন, মোট ৫০ শতক জমিতে ফুলের চাষ করেছি। এর মধ্যে ৩০ শতক নিজের এবং বাকি ২০ শতক লিজ নেওয়া। ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু করি ফুলচাষ। এরই মধ্যে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় দেড় লাখ টাকার ফুলগাছ উৎপাদন করেছি।
শুধু শাহ আলী নয়। শিবনাথপুর গ্রামের আলোয়া বেগম, আব্দুল হালিম, নাসির উদ্দিন, আব্দুল মান্নান, রফিকুল ইসলামসহ অনেককেই নতুন জীবন দিয়েছে রঙিন ফুল।
নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এক সময় হাটে হাটে সবজি কেনা-বেচা করে সংসার চালাতাম। প্রায় ২০ বছর আগে নিজের প্রায় ৪০ শতক জমিতে ফুলের চাষ শুরু করি। পাশাপাশি অন্য ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারাও উৎপাদন শুরু করি এতটুকো জমিতেই। আর তাতেই পাল্টাতে থাকে ভাগ্যের চাকা। ফুলচাষ করে ৪০ শতক জমিতে ৪/৫ মাসেই আয় করেছি ২ লাখ টাকা। আর বাকি সময়ে অন্য চারা উৎপাদন করেও আয় হয় লাখ লাখ টাকা।
এ গ্রামের ফুল চাষিরা জানান, শিবনাথপুর গ্রাম শুধু নয়, আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের অন্তত অর্ধশতাধিক কৃষক ফুল ও গাছের চারা উৎপাদন করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। অক্টোবর মাসের প্রথমদিকে চাষিরা দেশি-বিদেশি গোলাপ, চাইনিজ গাঁদা, হাইব্রিড গাঁদা, দেশি গাঁদা, বর্ষালী গাঁদা, ডালিয়া, সূর্যমুখী, হাসনাহেনা, গন্ধরাজ, জবা, গেটফুল, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা জাতের ফুল গাছের চাষ শুরু করেন। ডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এসব ফুলগাছ বিক্রি হয়। এ গ্রামের ফুলগাছ চাষিদের দেখে সারটিয়া, হামকুড়িয়া, শিয়ালকোলসহ আশপাশের গ্রামগুলোর কৃষকরাও ফুল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন বলেও জানান তারা।
শিয়ালকোল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান শেখ বাংলানিউজকে বলেন, শিবনাথপুর গ্রামটি ফুল চাষের জন্য খ্যাতি পেয়েছে। ওই গ্রামে চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ী মানুষের সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগ মানুষই হতদরিদ্র। বেশ কয়েকবছর ধরে গ্রামের কিছু লোক ফুলগাছ ও অন্য ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ফুল ও ফলগাছ চাষিদের রেজিস্ট্রেশন করাচ্ছি। ইতোমধ্যে জেলায় ৬৫ জন চাষি নিবন্ধিত হয়েছেন। অন্যদেরও পর্যায়ক্রমে নিবন্ধিত করা হবে। এসব চাষিরা বছরের ৪/৫ মাস ফুলের চাষ ও চারা উৎপাদন করে থাকেন। পরবর্তীতে হর্টিকালচার সেন্টারের প্রশিক্ষণেও তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এদের প্রশিক্ষিত করতে পারলে আরও বেশি বেশি ফুলের উৎপাদন বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
এসআরএস