ঋতুরাজকে আলিঙ্গনের আহ্বান জানিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ অমীয় বাণীটি আজ সত্যিই তরুণ মনে দোলা দিয়েছে। দুয়ারে আগুনরাঙা বসন্ত দেখে সবার মন যেন ছুটে যেতে চাইছে অরণ্যে।
গাছের কঁচি পাতায় ফাগুনের ছোঁয়া। দক্ষিণা বাতাসে দূর থেকে ভেসে আসা কোকিলের কুহু কুহু কলতানে আজ তাই ঘর ছেড়েছে তারুণ্য। তাইতো মধুময় যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনার বসন্তে আজ মেতে উঠেছে রাজশাহী।
বাঁধ ভাঙা আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও উদ্বেলতায় নানা আয়োজনে সবাই ঋতুরাজকে সাড়ম্বরে বরণ করে নিচ্ছে। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পয়লা ফাল্গুন সকাল থেকেই বসন্ত বরণ উৎসবে মুখরিত হয়ে উঠেছে এ নগর। আজ ভালোবাসা দিবসও। বাংলা ক্যালেন্ডার পরিবর্তিত হওয়ায় এখন থেকে পহেলা বৈশাখসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলো নির্দিষ্ট দিনে পালন হবে। যার ফলে প্রতিবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন পালন করা হলেও ২০২০ সাল থেকে এ দিনটি পালন করা হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দিবসগুলোকে সমন্বয় করতে পরিবর্তন করা হয়েছে বাংলা ক্যালেন্ডার। কেবল বাংলাদেশের জন্যই এ পরিবর্তন। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে এ পরিবর্তন করা হয়নি।
তাই বলা যায়, বসন্ত ছুঁয়েছে ভালোবাসা। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষ ভিন্ন আবহে প্রাণ উজাড় করে যোগ দিয়েছেন আজ বসন্ত বরণ উৎসবে। ঐতিহ্যবাহী ও তিনবারের দেশসেরা রাজশাহী কলেজে বাসন্তী রঙের বর্ণিল শোভাযাত্রা, কবিতাপাঠ, নাচ আর গানের ছন্দে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চলছে ফাল্গুনী উৎসব। হলুদ রঙে রঙিন হয়ে স্বপ্নজয়ী তারুণ্যের ঢেউ লেগেছে যেন সব আয়োজনেই।
এছাড়া বরাবরের মত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বিশেষত চারুকলা এবারও রয়েছে বসন্তের মূল আকর্ষণ। প্রতিবছরের মত এবারও সেখানে বেজে উঠেছে নতুন প্রাণের স্পন্দন। শীতের শুকনো পাতার মড় মড় ধ্বনি ভেঙে উৎসাহ উদ্দীপনায় শিক্ষক-শিক্ষিকা, বন্ধু আর সহপাঠীদের নিয়ে সবাই আনন্দে মেতে উঠেছেন।
পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে সকালে রাজশাহী কলেজ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মুহা. হবিবুর রহমান শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন। এতে কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। বাদ্য-বাজনার ছন্দে ছাত্রীদের হলুদ শাড়ি আর ছাত্রদের হলদে পাঞ্জাবি বরণে শোভাযাত্রাটি পুরো শহরে যেন জানান দেয় আজ বসন্তের দিন। শোভাযাত্রাটি মহনগরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফের কলেজে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে নগরের বিভিন্ন বিনোদন স্পটেও আজ তরুণ-তরণীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের ঢল নেমেছে। মেয়েদের পরনে হলুদ রঙের শাড়ি, খোঁপায় গাঁদা ফুল, আবার কারও কারও খোঁপায় রঙিন ফুলের রিং। ছেলেদের পরনে রয়েছে হলুদ অথবা সফেদ রঙের পাঞ্জাবি। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে গিয়ে মোবাইল ফোন দিয়েই অনেককে ফটোসেশন সারতে দেখা গেছে। বন্ধুদের নিয়ে জটলা করে মোবাইলের ক্যামেরায় সেলফি তুলেও তা স্মৃতিবন্দি করছেন অনেকে।
সকাল থেকে রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, জিয়া পার্ক, বড়কুঠি পদ্মাপাড়, টি-বাঁধ, ভদ্রার শহীদ মনসুর রহমান পার্ক, পদ্মা গার্ডেনসহ অন্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কেউ বন্ধু-বান্ধবীকে নিয়ে, কেউ প্রিয়তমা, কেউ আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে বিভিন্ন বাহনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
এসএস/আরবি/