ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

চাটাই বুনে জীবনযুদ্ধ জয়ের আশা ঝরনার

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২১
চাটাই বুনে জীবনযুদ্ধ জয়ের আশা ঝরনার ঝরনা, ছবি: বাংলানিউজ

মানিকগঞ্জ: জীবন-জীবিকার তাগিদে তিন বছর আগে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা থেকে মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের ঘরিয়ালা বাজার এলাকায় আসেন ঝরনা সরদার (৩০)।  

প্রথমে প্লাস্টিকের চাটাইয়ের কারখানায় কাজ করতেন তিনি।

কিন্তু পরে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিজেই তৈরি শুরু করেন চাটাই। পরে তা বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করে যে টাকা পান, সেই টাকা দিয়ে দুই সন্তান আর স্বামী নিয়ে চলে তার সংসার।

ঝরনা সরদার বাংলানিউজকে বলেন, মানিকগঞ্জে আসার আগে সাতক্ষীরায় সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে চলেছি। পরে পেট চালাতে কাজের সন্ধানে গত তিন বছর আগে চলে আসি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের ঘরিয়ালা বাজার এলাকায়। এখানে প্রথমে কেউ কাজ দিতে চাননি। পরে অনেক ঘুরে বেরিয়ে এলাকাটির একটি প্লাস্টিকের চাটাইয়ের কারখানায় কাজ জোগার করি। কিন্তু সেই সুখটুকুও সইলো না আমার। কয়েকদিন পর ওই কারখানাটিও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তখন সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে কোথায় যাবো? তাই বাধ্য হয়ে নিজেই শুরু করি চাটাই তৈরির কাজ। চাটাই তৈরি মজুরিটা অনেক কম। তবে পরিশ্রম কম হওয়ায় কাজটি করছি। প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ কেজি চাটাই তৈরি করতে পারি। প্রতি কেজি চাটাই তৈরি করতে মজুরি পাই ২৫ টাকা, আর যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনো মতে চলে যায় সংসার।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর আগেও গ্রামাঞ্চলে ধান রাখার জন্য বাঁশের তৈরি ডোল ও রান্না ঘরের বেড়া থেকে চালের ছাউনিতে ব্যবহার হতো বাঁশের তৈরি বেতির। কিন্তু এখন সেখানে আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে। বাঁশ দিয়ে তৈরি বেতির জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকের বেতি। দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় বলে মানুষজন প্লাস্টিকের বেতির তৈরি পণ্যের দিকে ঝুঁকছে।  

দেখা গেছে, শীতের সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা অবধি ভাড়া বাসার উঠানে প্লাস্টিকের চাটাই তৈরি করছেন ঝরনা সরদার। তৈরি চাটাইগুলো পরে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ফেরি করে বিক্রয় করছেন তার স্বামী মিলন সরদার।  

ঝরনা আর মিলনের দেখাদেখি এখন অনেকেই চাটাই তৈরির এ ব্যবসায় আগ্রহ দেখিয়ে ঝুঁকছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষ এই চাটাই তৈরিতে কাজ করছেন তার ভাড়া বাসার উঠানে।

মিলন সরদার বাংলানিউজকে বলেন, অভাবের তাড়নায় গত তিন বছর আগে সাতক্ষীরা থেকে পরিবার নিয়ে মানিকগঞ্জে আসি। সে সময় কোনো কাজ না পেয়ে চাটাইয়ের এ কাজ শুরু করি। পরিশ্রম কম হওয়ায় এখনো এই কাজটি করছি। চাটাই তৈরির জন্য গাজীপুর, আশুলিয়া ও গুলিস্থান থেকে ৫০ টাকা কেজিতে প্লাস্টিকের বেতি ক্রয় করি। সেই বেতি পরিষ্কার করে ধান রাখার ঢোল, রান্না ঘরের জন্য বেড়া ও ছাউনি তৈরি করি। আবার অনেকে বাড়ির উঠানের মাটি ধরে রাখতে প্লাস্টিকের তৈরি চাটাই ব্যবহার করে থাকেন।  

দীর্ঘ দিনেও নষ্ট না হওয়ায় দিন দিন প্লাস্টিকের তৈরি এই চাটাইয়ের ব্যবহারের বাড়ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।