ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ডা. জাফরুল্লাহর নামে ছাত্র ইউনিয়ন নেতার মামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২
ডা. জাফরুল্লাহর নামে ছাত্র ইউনিয়ন নেতার মামলা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী (ফাইল ছবি)

শরীয়তপুর: ইতিহাস বিকৃত করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নামে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নামে শরীয়তপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় এরইমধ্যে সমন জারি করা হয়েছে।

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মামলাটি দায়ের করেছেন ছাত্র ইউনিয়ন শরীয়তপুর জেলার সভাপতি সাইফ রুদাদ।  

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস মামলাটি নেন। মামলা নং- ১৫/২০২২।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ০২ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) এক প্রতিবাদ সভায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, কাদের মোল্লা (রাজাকার) ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ মিডিয়াগুলোতে হৈ চৈ পরে যায়।  

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এ বক্তব্য ছাত্র ইউনিয়নের ইতিহাস, ঐতিহ্যের প্রতি আঘাত ও মানহানিকর বলে দাবি করেছেন শরীয়তপুর শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক জি কে সাজ্জাদসহ বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা।


মামলার বাদী বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন শরীয়তপুরের সভাপতি সাইফ রুদাদ বলেন, ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য নাম বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭০ এবং ’৭১ -এর মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সব ন্যায্য আন্দোলনে সামনের সাড়িতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। সেই সংগঠনকে ইতিহাসের ঘৃণিত এক ব্যক্তির নামের সঙ্গে জড়ানো ইতিহাস বিকৃতির সামিল এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। হুমায়ুন আজাদ স্যারের ‘একবার রাজাকার মানে চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা মানে চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা নয়’ উক্তিটি আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চাই, ছাত্র ইউনিয়নের ইতিহাস বিকৃত করে জাফরুল্লাহরা বাংলাদেশের ইতিহাসকেই বিকৃত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই ছাত্র ইউনিয়নের ইতিহাস বিকৃত করার দায়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নামে মামলাটি দায়ের করেছি, আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছেন। তিনি যদি প্রমাণ দিতে না পারেন, তাহলে দেশীয় আইনেই তার বিচার হবে।

মামলাটির আইনজীবী আজিজুর রহমান রোকন বলেন, ইতিহাস বিকৃত করে ভুল তথ্য দেওয়া এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আমাদের জানতে হবে। আমরা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নামে মামলা করেছি। আমরা ন্যায় বিচার চাই।

উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে কাদের মোল্লা তার ছাত্রজীবনে ফরিদপুরে থাকাবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংঘর সামনের সারির নেতা ছিলেন। এরপর তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি হন। পরে ঢাবির সলিমুল্লাহ হল শাখার সভাপতি, ঢাবি শাখার সভাপতি, ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে ছাত্র সংঘর যাবতীয় কাজে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন।  

১৯৭১ সালের একজন প্রতিষ্ঠিত রাজাকার হিসেবে প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধী হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তাকে মৃত্যুদণ্ড দিলে তা কার্যকরও করা হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এদেশের স্বাধীনতা ও স্বাধীকার আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। ’৭১ -এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র ইউনিয়ন তার গেরিলা বাহিনী নিয়ে এদেশকে মুক্ত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করলে তার অনেক কর্মী শহীদ হন। কাদের মোল্লার মতো একজন ঘৃণিত ব্যক্তি ১৯৭১ সালে ছাত্র ইউনিয়ন করতো মর্মে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য ইতিহাস বিকৃত করার শামিল ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।