ঢাকা, বুধবার, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক দশকে অর্ধশত পুকুর ভরাট

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক দশকে অর্ধশত পুকুর ভরাট

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের পুনিয়াউট পাকা ঘাটলা পুকুর। এক সময়ের দৃষ্টিনন্দন পুকুরটি এখন অস্তিত্ব হারিয়ে বিলীন প্রায়।

 

পুকুরের চার পাশে আর্বজনার স্তূপ। আর পুকুর জুড়ে কচুরিপানার রাজত্ব। কচুরিপানা আর আগাছার আধিক্য দেখে মনে হয় পুকুর তো নয়, যেন সবুজ মাঠ।  

এক সময়ের প্রাণের এ পুকুরটি বর্তমানে পরিত্যক্ত মনে হলেও তা কিন্তু নয়। অতিলোভী বিভিন্ন মহল অনেকটা কৌশলে পুকুরটি ভরাট করে যাচ্ছে। শুধু এ পুকুরটিই নয়, এমন আরও বহু পুকুর রয়েছে, যা কৌশলে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও প্রকাশ্যে বা রাতের আঁধারে চলে পুকুর ভরাটের কাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ছিল পুকুর। এসব পুকুরে সাধারণ মানুষ গোসলসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম করত। এসব পুকুরের পানি অনেকে আবার পানও করত। কিন্তু কালের পরিক্রমায় কমেছে পুকুরের সংখ্যা। প্রভাবশালী মহল সরকারি বিধি-নিষেধ অমান্য করে বিভিন্ন কৌশলে এসব পুকুর ভরাট করে ফেলছে। এখনও যেসব পুকুর অবশিষ্ট রয়েছে, সেগুলোর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার পশ্চিম মেড্ডা, পাইক পাড়া, কালাইশ্রীপাড়া, কান্দিপাড়া, পুনিয়াউট, শিমরাইলকান্দি, মুন্সেপাড়া, ভাদুঘরসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, চক্রটি প্রথমে পুকুরের যে কোনো একটি অংশ ময়লা আর্বজনা দিয়ে ভরাট করার কাজ শুরু করে। এতে পুকুরের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে পুরো পুকুরটি রাতের আঁধারে ভরাট করে ফেলা হয়। কিছু কিছু পুকুর থাকলেও তা ব্যবহার হচ্ছে না।  

সচেতন মহল বলছে, এক সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে পুকুরের শহর বলা হতো। ১২টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে প্রায় ছয়/সাতটি করে পুকুর ছিল। এক যুগের মধ্যে অসংখ্য পুকুর ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে বিভিন্ন মহল। যার ফলে কমে যাচ্ছে পুকুরের সংখ্যা। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে অচিরেই পুকুর শূণ্য হয়ে পড়বে এ জেলা।

পুনিয়াউট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুর রহমান খান টুটুল বাংলানিউজকে বলেন, এক সময় মানুষ পুকুরে গোসল করত। রান্না ও থালাবাসন পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হতো পুকুরের পানি। আশপাশের কোনো বসত বাড়িতে আগুন লাগলে, পুকুরের পানি দিয়ে নেভানো হতো। কিন্তু এসব পুকুরকে কিছু মহল ধ্বংস করে দিচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মলাই মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে ময়লা ফেলে পুকুরের একটি অংশ ভরাট করে এখানে একটি ছোট ঘর নির্মাণ করা হয়। পরে এর পেছন দিয়ে রাতের আঁধারে মাটি দিয়ে পুরো পুকুরটি ভরাট করে ফেলা হয়। পরে কৌশলে এসব স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যদিও সরকারিভাবে কোনো পুকুর বা জলাশয় ভরাট করা সম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে।  

ক্ষোভ প্রকাশ করে ইকবাল মিয়া নামের এক বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, পুকুর ভরাটের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা দেখছি না। তারা নামে মাত্র একটি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে চলে যায়। পরে আর কোনো খোঁজ খবর রাখে না।  

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৯টি এবং ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আরও ২০টি মামলা হয়েছে। এ ৩৯টি মামলার ৩০টি ছিল জলাধার ভরাট বিষয়ে। অধিকাংশ মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন।

নদীরক্ষা কমিটি নোঙরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার সভাপতি শামীম আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, গত এক দশকে অর্ধশতাধিক পুকুর ভরাট হয়েছে। জেলায় কতগুলো পুকুর রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কারো কাছে নেই। তিনি অবিলম্বে বিভিন্ন পুকুরসহ বিভিন্ন জলাধারের তালিকা করার দাবি জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দস বাংলানিউজকে বলেন, পৌরসভা নিয়ন্ত্রণাধীন নয়টি পুকুরসহ ব্যক্তি মালিকাধীন বহু পুকুর রয়েছে। এসব পুকুর ভরাটের বিষয়ে খবর পেলেই আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।  

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুস সামাদ বাংলানিউজকে বলেন, শহরের ভেতরে যখন কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটে, তখন পুকুর না থাকায় পানির অভাবে সমস্যায় পড়তে হয়। তবে কোথাও পুকুর ভরাট হলে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসে না। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, পুকুর ভরাট প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জলাধার ভরাটের শাস্তির বিষয়ে বিভিন্ন পুকুরে দৃষ্টিনন্দন সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।