ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পাহাড়ে উৎসবের আমেজ

কৌশিক দাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
পাহাড়ে উৎসবের আমেজ

বান্দরবান: পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রতিবছরই পার্বত্য এলাকা বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে উদযাপন করে সাংগ্রাই উৎসব। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাহাড়ি জাতিসত্তার মধ্যে মারমা জনগোষ্ঠী পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করে সাংগ্রাই।

করোনার কারণে গেল ২ বছর কোনো কর্মসূচির আয়োজন করতে না পারলেও এবার সাংগ্রাই উৎসব উদযাপনের জন্য চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

প্রতি বছর নানা আয়োজনে মারমা সম্প্রদায় এই বাংলা নববর্ষ পালন করে থাকে আর মারমা ভাষায় এই উৎসবকে বলা হয় সাংগ্রাই। মূলত তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানেই মারমা সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বেশি, তাই বান্দরবানে মূলত এই সাংগ্রাইকে ঘিরে কয়েকদিনব্যাপী চলে বর্ণিল আয়োজন।

এদিকে কদিন পরেই সাংগ্রাই উৎসব তাই নতুন পোশাক আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ভিড় পড়েছে স্থানীয় বাজারগুলোতে, শেষ মুহূর্তের বেচাকেনায় দারুণ খুশি ক্রেতা-বিক্রেতারা।

বান্দরবানের হ্যাপী মার্কেটের ব্যবসায়ী মো.ফরহাদ বলেন, নববর্ষ ও সাংগ্রাই উপলক্ষে আমাদের বিক্রি বেড়েছে। বিভিন্ন পাড়া থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর যুবক-যুবতীরা আসছেন নতুন পোশাক কিনেতে।

বার্মিজ মার্কেটের দোকানদার হ্লা হ্লা প্রু বলেন, এই সময়টা আমাদের বিক্রি ভালো হয়। মূলত নতুন বছরের শুরুতে পোশাক কিনতে বেশিরভাগ ক্রেতা দোকানে ছুটে আসছেন।

এদিকে বান্দরবানের সাংগ্রাই উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শৈটিং ওয়াই মারমা জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও নতুন বছরকে বরণ আর পুরনোকে বিদায় জানিয়ে সাংগ্রাই উৎসবকে প্রাণবন্ত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সাংগ্রাই উদযাপন কমিটি, আর এই সাংগ্রাই উৎসবের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বাঙালিদের অংশগ্রহণে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের পূর্ণতা ঘটবে এমটাই আমাদের প্রত্যাশা।

তিনি আরো বলেন, নানা আয়োজনে ১৩ এপ্রিল সকালে বান্দরবান রাজার মাঠ থেকে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হবে সাংগ্রাই উৎসব, আর শোভাযাত্রা শেষে অনুষ্ঠিত হবে বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা।

১৪ এপিল ভোরে মিনি ম্যারাথন দৌড়, পবিত্র বুদ্ধ মূর্তি স্মান আর ১৫ এপিল বিকেলে মৈত্রি পানি বর্ষণ, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসবের মাধ্যমে বান্দরবানে সমাপ্তি ঘটবে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এই সাংগ্রাই উৎসবের।

বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক মংনুচিং বলেন, পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সবচেয়ে বড় উৎসব হল সাংগ্রাই (নববর্ষ)। নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখা এবং পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পার্বত্য জেলার মারমা সম্প্রদায় বান্দরবানে সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন করে।

পার্বত্য এলাকায় এই ধরণের বর্ণাঢ্য আয়োজনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরিন আখতার বলেন, বান্দরবানে সাংগ্রাইং, বিজু, বৈসু, বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন পাড়া ও এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে থাকে সপ্তাহব্যাপী আর এই উৎসবে অনেক দেশি বিদেশি পর্যটকদের উপস্থিতি দেখা যায়। সবাই যাতে নিজ নিজ ধর্মীয় অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে উদযাপন করতে পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।