ভোলা: মেঘনায় -নৌ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত জেলে আমির হোসেনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কিছুতেই কান্না থামছে না বাবা-মা ও স্ত্রীর।
নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে এমন মৃত্যু যেন কিছুতেই মানতে পারছেন না তার পরিবারের সদস্যরা। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন তারা।
সরকার দুই মাসের জন্য মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবুও পেটের টানে নদীতে গিয়েছিলেন ভোলা সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের চর মোহাম্মদ আলী গ্রামের জেলে আমির হোসেনসহ ১১ জন। কিন্তু মাছ ধরতে গিয়ে পুলিশের গুরিতে মরতে হবে তা কে জানতো?
এদিকে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারিয়ে দিশাহীন হয়ে পড়েছে আমিরের পরিবার। ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা এবং প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী সুরভী বেগম।
তিনি (সুরভী বেগম) বলেন, ‘ঘরে অভাব, তাই সে (আমির) বাধ্য হয়ে নদীতে গেছে। কিন্তু সে তো ফিরে তো আইলো না। এখন এখন পোলা এবং বুড়ো শ্বশুর-শাশুড়িকে কে দেখবে? আমরা তো শ্যাষ হইয়া গেলাম। আমার একমাত্র পোলা (ছেলে) তো প্রতিবন্ধী। আমাগো পরিবার কে চালাইবে?’।
নিহত জেলে আমিরের মা ছকিনা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার পোলার দোষ নাই, হেরা আমার পোলারে গুলি কইরা মারছে। আমি পোলা হত্যার বিচার চাই। ’
নিহতের ভাই জামাল রাঢ়ীসহ জেলে পরিবারের অভিযোগ, যেসব জেলে ট্রলারের সঙ্গে নৌ-পুলিশের সংঘর্ষে হয়েছে তারা পার পেয়ে গেলেও বিনা দোষে পুলিশ গুলি চালিয়েছে আমিরের জেলেদের ওপর।
জানা গেছে, ভোলা সদরের চর মোহাম্মদ আলী গ্রামের আমিরসহ একই এলাকার মনির, কামাল, সবুজ, সবুজ মাঝি, এমরান, মো. আলী, মোকতার ও সাইফুরসহ ১১ জেলে মনির চৌকিদারের ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। রাত ৯-১০ টার দিকে টহলরত নৌ-পুলিশের সঙ্গে জেলেদের সংঘর্ষ হয়। এতে এক জেলে নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন।
নিহত জেলে আমিরের বোন নার্গিস বেগম ও ভাই জামাল রাঢ়ী বলেন, নদীতে নৌ-পুলিশের সঙ্গে তার ভাইদের কোনো ঝামেলা হয়নি, ঝামেলা হয়েছিল অন্য ট্রলারের সঙ্গে। কিন্তু তারপরও তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে নৌ-পুলিশ।
এদিকে নৌ পুলিশের দাবি করছে জেলেদের ইটপাটকেলের আঘাতেই আমিরের মৃত্যু হয়েছে। নৌ-পুলিশের মজু চৌধুরির হাট ঘাটের ইনচার্জ মো. জামান বলেন, পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায়নি। জেলেদের আঘাতে নৌ-পুলিশের ৬ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। জেলেদের নিজের ইটের আঘাতে আমির নামে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে।
জানতে চাইলে ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুচিত কুমার হালদার বলেন, আগে ঘটনার সঠিক তদন্ত হবে। তারপর যদি জেলেরা নির্দোষ হয় তাহলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, শনিবার (৯ এপ্রিল) রাতে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় মেঘনা নদীতে নৌ-পুলিশের সঙ্গে জেলেদের সংঘর্ষে আমির হোসেন (৩০) নামে একজন নিহত হন। এসময় নিজেদের ৬ সদস্য আহত হন বলে নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করে তাদের হাসপাতালে ভর্তির কথা জানানো হয়েছে। তবে তাদের গুলিতে জেলে নিহত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে নৌ পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৬ ঘণ্টা, ১১ এপ্রিল, ২০২২
এমএমজেড