ঢাকা: সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ ভেঙে ফসলের ক্ষতির ঘটনায় কারো গাফিলতি থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কৃষকদের কৃষি ঋণ মওকুফের কথা সরকার ভাবছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।
সোমবার (১১ এপ্রিল) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানানা তারা।
জাহিদ ফারুক বলেন, মোট দুই লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে মাত্র পাঁচ হাজার হেক্টরের জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। এটা আমি মনে করি পারসেন্টেজে কম। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কৃষির ক্ষেত্রে কৃষি ঋণ যদি কারো থাকে সেটা যেন মওকুফ হয় সেটা সরকার ভাবছে এবং এভাবেই এগোচ্ছে।
তিনি বলেন, নদীর পাড়ে যে পলিমাটিগুলো নরম থাকে, যখন পানি নামতে পারে না তখন বাঁধগুলো নরম হয়ে যায় এবং প্রাকৃতিক কারণে নদী ভাঙন হয়ে যায়। এটা কিন্তু বন্ধ করা যাবে না। এটার মধ্যে বসবাস করতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কৃষিমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাওরে যাবো এবং কত পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটা জানতে পারবো। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সর্বাবস্থায় সক্রিয় আছি। আমরা চাই না ফসলের হানি হোক।
মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে মতামতসহ প্রতিবেদন দেবে কমিটি।
হাওরের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। আশা করি আগামী বছরে সেই সমস্যা হবে না। এরই মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
বার বার বাঁধ ভাঙার অভিযোগ আসে কিন্তু জড়িতদের শাস্তি হয় না—এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এমন ৮ জন প্রকৌশলীকে কিন্তু আমরা সাসপেন্ড করেছি। এটা আইনের মাধ্যমে করতে হবে। এটা তো আর্মি না যে, একজন লোককে রিটায়ার্ড করে দেওয়া যায়। নিয়মের বাইরে কাউকে সাসপেন্ড করতে পারব না। দুদকের মামলা চলবে, নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেই ৮ জনের বিরুদ্ধে। আমরা রাতারাতি একজন প্রকৌশলীকে বলতে পারি না তোমরা বাড়ি চলে যাও। আমরা নিয়মের মধ্যে চলছি। আমি বলব না পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ দুর্নীতি করে না। দুর্নীতি করে, আমরা চেষ্টা করছি সেটি কমিয়ে আনার জন্য, সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য।
সুনামগঞ্জ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জানিয়ে উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ৫৩৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে তিন জায়গায় যথাক্রমে ৫০, ৫০ ও ৩০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। একটা জায়গায় বন্ধ করতে পেরেছিলাম এবং আরেকটা জায়গায় পানির গভীরতা ৫০-৬০ মিটার। আরেকটা মেরামতের কাজ চলছে। আমরা পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। হাওর আন্দোলনের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছি, তাদের পরামর্শ মাথায় রেখে কাজ করছি। আজ থেকে ১৩ বছর আগে ভাঙন ছিল সাড়ে নয় হাজার হেক্টর, এখন সেটা সাড়ে তিন হাজার হেক্টরে এসেছে।
গত ১-৬ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে রেকর্ড পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একদিনে ১৩০ মিলিমিটার এবং মোট ১২শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। হঠাৎ এই বৃষ্টিপাতের কারণে এই ক্ষতি হয়েছে। এই মন্ত্রণালয় মানবতার মন্ত্রণালয়, আমরা মানবতার পাশে আছি কিনা সেটা হচ্ছে কথা। আমাদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি এবং যেখানে গাফিলতি আছে তাদের চিহ্নিত করে বিভাগীয় এবং আইনের আওতায় আনার জন্য যে প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়া মাথায় রেখে এগোচ্ছি।
সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ১৮-১৯ সালে স্টাডি করে দেখেছি কোন জায়গা দিয়ে পানি গড়ায়। যেখানে প্রতিবছর কাটা হয় এবং ভরাট করা হয় সেখানে। সেখানে জিও ব্যাগ ব্যবহার করা হবে। সেখানে নৌ চলাচল হবে। যখন খোলার প্রয়োজন হবে তখন খুলে দেব আর যখন বন্ধ করা দরকার তখন বন্ধ করে দেব।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
এমআইএইচ/এমজেএফ