ঢাকা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে. আবদুল মোমেন ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি ইয়োশিমাসার মধ্যে সোমবার ( ১১ এপ্রিল) জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
২০২১ সালের নভেম্বরে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি ছিল তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।
এ বছর ১০ ফেব্রুয়ারি দুই বন্ধুপ্রতীম দেশ তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ২০২২ বছরজুড়ে এই বার্ষিকী উদযাপনের জন্য আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
জাপানের নাম বাংলাদেশের জনগণের কাছে অতি প্রিয় এবং জাপান এশিয়াতে বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বাংলাদেশে আরও জাপানি বিনিয়োগের, বিশেষ করে সুনীল অর্থনীতি, অটোমোবাইলস, আইসিটি, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্রকৌশল, ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদির মতো উদীয়মান খাতে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান । জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রায়নের সঙ্গে সঙ্গে আরও জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে এবং দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে অর্থনীতি, আইসিটি এবং ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে আরও সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী দ্রুত শিখতে পারে ও পরিশ্রমী এবং দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ার লক্ষ্যে জাপান সরকারকে আরও বেশি সংখ্যক বৃত্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তার অনুরোধ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি বলেন, জাপান মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশকে বৃত্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দান অব্যাহত রাখবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বাংলাদেশকে জাপানের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন এ সকল সহায়তার কারণেই বাংলাদেশ এ পর্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করেছে।
এছাড়া দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা এবং ভাষান চরে স্বেচ্ছায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরসহ এ পর্যন্ত গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়টি তুলে ধরেছে। বাংলাদেশকে এ পর্যন্ত প্রদেয় সহায়তার পাশাপাশি এ সমস্যা নিরসনে জাপানের অবিচল প্রতিশ্রুতির জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাপানকে ধন্যবাদ জানান এবং এ সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য জাপানের আরও সম্পৃক্ততা আশা করেন।
দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু এবং বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশের ওপর এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বৈশ্বিক ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বাংলাদেশেআঞ্চলিক অভিযোজন কেন্দ্রের জন্য জাপানের সহায়তা কামনা করেন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে ভবিষ্যৎ প্রার্থিতা নিয়েও আলোচনা করেছেন এবং একে অপরের প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি তা বিবেচনা করতে সম্মত হন।
উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠকটি শেষ হয়। টোকিওতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, শাহাবুদ্দিন আহমদ, মিশন উপ-প্রধান শাহ্ আসিফ রহমান এবং পরিচালক (পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়) এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেন, এমপি ১১-১৫ এপ্রিল পালাও-এ অনুষ্ঠিতব্য মহাসাগর বিষয়ক সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়ার পথে টোকিও-তে যাত্রা বিরতি করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
টিআর/এসআইএস