বরিশাল: আগামী ২৫ জুন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে চালু হতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু। এর ফলে কোনো ধরনের বিরতি ছাড়াই বরিশাল থেকে স্বল্প সময়ে সরাসরি ঢাকায় যেতে পারবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।
আর গন্তব্যে পৌঁছানোর সময় স্বল্পতার কারণে সড়কপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে নতুন বিপ্লব ঘটাবে পদ্মা সেতু এমনটাই মনে করছেন সাধারণ মানুষ। তাই এখন প্রশ্ন উঠেছে, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকায় যাওয়ার জনপ্রিয় নৌ-রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর ভাগ্যে কী ঘটবে।
বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটের নিয়মিত যাত্রীদের মতে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পাশাপাশি বাকি সড়কপথ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটলে সময়ের দিকে তাকিয়ে সড়ক বাহনের ওপরই ঝুঁকবেন বেশির ভাগ মানুষ।
যাত্রীরা বলছেন, লঞ্চে সারা রাত ধরে যাত্রা করে ঢাকায় পৌঁছাতে হয়, সেখানে বরিশাল থেকে ঢাকায় বাসে মাত্র কয়েক ঘণ্টার যাত্রা হবে। আবার লঞ্চের কেবিনের বর্তমান যে ভাড়া তার থেকে নিঃসন্দেহে বাসের ভাড়া কম হবে। আর এ দুটি কারণেই কিছুটা হলেও যাত্রী হারাবে বিলাসবহুল লঞ্চগুলো।
যদিও লঞ্চ স্টাফরা বলছেন, বরিশালসহ দক্ষিণের ছয় জেলা থেকে বিলাসবহুল লঞ্চে ঢাকায় যাতায়াতের সময় ডেকের ভাড়া ও সেবার উন্নত মানের কারণে পদ্মা সেতু চালু হলেও তেমনভাবে সংকট হবে না যাত্রীদের। আবার পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে বরিশাল-ঢাকা সড়কপথে পরিবহন ও যাত্রী দুটির চাপই বাড়বে। এক্ষেত্রে লঞ্চের বহু যাত্রী সড়ক পরিবহনমুখী হবেন।
তবে লঞ্চ মালিকরা বলছেন, বরিশাল-ঢাকা রুটে বিমানের ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর লঞ্চের কিছু যাত্রী হারাতে হয়েছে। যদিও এর প্রভাব তেমনভাবে পড়েনি নৌ-সেক্টরে। আবার পদ্মা সেতু চালু হলেও কিছু যাত্রী হারাতে হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে তাতে বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়বে না নৌ-সেক্টরে। এতে কিছু নিয়ম-নীতির পরিবর্তন, পরিবর্ধন করতে হতে পারে তাদের।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ হিসেবে বলবো পদ্মা সেতু হলো আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। এটি গোটা দক্ষিণাঞ্চলে যে পরিবর্তন আনবে, তাতে এ অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে এবং প্রতিটি মানুষ উপকৃত হব। এ অঞ্চলে শিল্প বিল্পবের পাশাপাশি কৃষি, পর্যটন শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটবে। অন্যত্র থেকে এ অঞ্চলে মানুষের আনাগোনাও বাড়বে।
ফলে পদ্মা সেতুর কারণে লঞ্চ সেক্টরে বড় ধরনের কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণের অর্থাৎ আমাদের এ অঞ্চলের বাসের যাত্রীরা বাসেই, আর লঞ্চের যাত্রীরা লঞ্চেই যাত্রা করেন। কারণ যাত্রীসেবায় লঞ্চের সময় ও সেবার মান একটি বড় বিষয়। সেইসঙ্গে তুলনামূলক ভাড়া কম হওয়ার পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলো বিলাসবহুল, আরামদায়ক ও নিরাপদ হওয়ায় এ সেক্টরে যাত্রী শূন্য হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং পদ্মা সেতু চালুর পর নদীমাতৃক এ অঞ্চলে যে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে সেখানে নৌ-সেক্টরের জন্য নতুন সম্ভবনা সৃষ্টি হবে। এতে নৌ-সেক্টরের বেসরকারি বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, এ সরকারের আমলে শুধু সড়ক পথ নয়, নদী পথেরও উন্নয়ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা শুধু নদীপথ সচল রাখার জন্য ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দিয়েছেন। আর নদীপথ সচল থাকলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সড়কপথের পাশাপাশি সাশ্রয়ে ও সহজে নদীপথেও যাতায়াত করতে পারবে।
যদিও বিলাসবহুল অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের মালিক নিজাম উদ্দিন মৃধার মতে, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ-যাত্রী পরিবহন সেক্টরে কিছুটা প্রভাব পড়বেই। নৌপথের বেশ কিছু যাত্রী সড়ক পথের ওপর নির্ভরশীল হবে।
আর এ কারণে এ সেক্টরের প্রতি সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করে তিনি বলেন, যাত্রীবাহী নৌযান অর্থাৎ নৌ-সেক্টরে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। সরকার দৃষ্টি দিলে এ সেক্টরের বিকাশ ঘটবে। বিশেষ করে সাগরকন্যা কুয়াকাটাসহ নদীবেষ্টিত অপার সম্ভাবনাময় বরিশালের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটাতে হবে। আর পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে নদীবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলে নৌ-শিল্পের বিকাশ আরও ঘটবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২২
এমএস/আরবি