ঢাকা, রবিবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

বড়াইগ্রামে সাংবাদিকের ওপর হামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৬ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
বড়াইগ্রামে সাংবাদিকের ওপর হামলা

নাটোর: নাটোরের বড়াইগ্রামে অবৈধভাবে খননকৃত পুকুরের মাটি ট্রলি দিয়ে নির্মাণাধীন সড়কে বহন ও চলাচলের পথ নষ্ট হওয়ার ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন এশিয়ান টিভি ও বাংলাদেশ বুলেটিন পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি মোতালেব হোসেন।

একই সঙ্গে তাঁর কাছ থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়াসহ আহম্মদপুর বাজারে তাঁর বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে হামলাকারীরা।

সাংবাদিক মোতালেবকে এলাকা ছাড়াসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

রোববার (১২ জুন) দুপুরে উপজেলার জোয়াড়ী ইউনিয়নের কেচুয়াকোড়া গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাংবাদিক মোতালেব হোসেন জীবনের নিরাপত্তা ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে বড়াইগ্রাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

হামলাকারীরা ওই ইউনিয়নের চিহ্নিত সন্ত্রাসী বলে জানা গেছে। তারা বেশ কিছু দিন ধরে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পার্শ্ববর্তী কামারদহ গ্রামে অবৈধভাবে কৃষি জমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রি করে আসছেন। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পান না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

অভিযুক্তরা হলেন— উপজেলার কেচুয়াকোড়া গ্রামের মৃত শাজাহান প্রামাণিকের ছেলে আব্দুল আওয়াল (৪০), মফিজ উদ্দিনের ছেলে তৌফিক (৩২), কামারদহ গ্রামের আরশেদের ছেলে রাসেল (২৫), বালিয়া গ্রামের মৃত কুদ্দুসের ছেলে নান্টু (৩০), ফজলুর ছেলে রবিউল (৩৩)।

বড়াইগ্রাম থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কেচুয়াকোড়া গ্রামে একটি সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। এ অবস্থায় অভিযুক্তরা বেআইনিভাবে পার্শ্ববর্তী কামারদহ গ্রামের কৃষি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি ট্রলি দিয়ে নির্মাণাধীন সড়ক দিয়ে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন।

এতে করে ওই নির্মাণাধীন সড়কের ক্ষতি হচ্ছিল। বিষয়টি স্থানীয়দের মুখে শুনে কেচুয়াকোড়া গ্রামের ওই সড়কে যান সাংবাদিক মোতালেব হোসেন। সেখানে ট্রাক্টরে মাটি বহনে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে অভিযুক্তরা আকস্মিকভাবে তাঁর ওপর চড়াও হন এবং মারপিট করে কাছে থাকা ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে যান।

এ সময় হামলাকারীরা ১২ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিক মোতালেব হোসেনের পা কেটে ফেলার হুমকি দেন। এছাড়া তাকে এলাকা ছাড়াসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। পাশাপাশি আহম্মদপুর বাজারে সাংবাদিক মোতালেবের বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জোর করে বন্ধ করে দিয়েছে হামলাকারীরা। এই ঘটনায় সাংবাদিক মোতালেব হোসেন ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিক মোতালেব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে কেচুয়াকোড়া গ্রামের আব্দুল আওয়াল ও তৌফিক মিলে কামারদহ গ্রামে অবৈধভাবে পুকুর খনন ও মাটির ব্যবসা করে আসছেন। একই সময়ে কেচুয়াকোড়া গ্রামে একটি সড়ক পাকাকরণ কাজও চলমান রয়েছে। আর এ অবস্থায় নির্মাণাধীন ওই সড়ক দিয়ে ট্রলিতে করে মাটি বহনের কারণে সড়কটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ দুপুরে সরজমিনে সেখানে যাই। পরে স্থানীয়দের সাক্ষাৎকার নেওয়া শেষে ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে আব্দুল আওয়াল ও তৌফিকসহ অন্যরা আমার ওপর চড়াও হন এবং মারপিট করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে যান।

তিনি বলেন, হামলাকারীরা আমাকে এলাকা ছাড়া করাসহ প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। ইতোমধ্যে আহম্মদপুর বাজারে আমাদের সার ও কীটনাশকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। তাই  বিষয়টির সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আব্দুল আওয়াল ও অন্যান্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সর্ম্পকে জানার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাদের পাওয়া যায়নি।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, ঘটনাটি শুনেছেন এবং এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বাংলানিউজকে জানান, তিনি ঘটনা শুনেছেন এবং বড়াইগ্রাম থানার ওসিকে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৫ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।