ফরিদপুর: ফরিদপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা এলেম শেখের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলায় কারাগারে থাকা সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।
বুধবার (২০ জুলাই) বিকেলে সালথার বালিয়া বাজারে গট্টি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়।
এ সময় মানববন্ধন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা এলেম মাতুব্বরের বাড়িতে হামলাকারীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. বাচ্চু মাতুব্বর, বীর মুক্তিযোদ্ধা হালিম মাতুব্বর, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. কাদের মাতুব্বর, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহিদ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাজেদ মোল্যা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আ. কাইয়ুম মিয়া, মো. আবুল বাসার প্রমুখ।
এ সময় মানববন্ধনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বরের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এলেম শেখের বাড়িতে হামলার ঘটনাকে পুঁজি করে একটি কুচক্রমহল সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বরের নামে একাধিক মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেন।
এদিকে, বীর মুক্তিযোদ্ধা এলেম শেখের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ওয়াদুদ মাতুব্বরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে মানববন্ধন থেকে দাবি করা হয়।
এছাড়া এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বরের নামে মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। পাশাপাশি অনতিবিলম্বে সব মামলাকে মিথ্যা মামলা আখ্যা দিয়ে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানানো হয়।
এদিকে ফরিদপুরের আদালত সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় কারাগারে থাকা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বরকে ২০ জুলাই জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে, এ মামলায় কারাগারে থাকা অন্য ১০ জন আসামির জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে।
অন্যদিকে, গত বছরের ০৫ এপিল সন্ধ্যার দিকে করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকরকে কেন্দ্র করে সালথার বিভিন্ন সরকারি অফিসে আলোচিত সহিংস তাণ্ডবের মামলায় ২০ জুলাই শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। এছাড়াও সালথায় চাঁদাবাজি ও মারাধর ঘটনায় পৃথক অন্য দু’টি মামলায়ও আদালতকর্তৃক উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
গত ০৮ জুলাই সন্ধ্যার দিকে উপজেলার গট্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু জাফর মোল্ল্যার ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা করে। সে সময় তিনি দৌঁড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা এলেম শেখের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তখনই হামলাকারীরা বীর মুক্তিযোদ্ধা এলেম শেখের বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এছাড়া এলেম শেখ ও তার স্ত্রী জয়গুন বেগমকে মারধর করা হয় বলে জানায় ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। পরে এ ঘটনার বিষয় উল্লেখ করে গত ০৯ জুলাই বীর মুক্তিযোদ্ধা এলেম শেখের স্ত্রী জয়গুন বেগম সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বরসহ মোট ৩৬ জনকে আসামি করে সালথা থানায় মামলা করেন। এ মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর গত ১৩ জুলাই ফরিদপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল আদালতে হাজিরা দিলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে যাওয়ার পর উপজেলা চেয়ারম্যানের নামে আরও দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। সে দু’টি মামলায়ও আদালতকর্তৃক তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এছাড়া সালথার আলোচিত তাণ্ডব মামলায়ও শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে।
এদিকে গত বছর ০৫ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকরকে কেন্দ্র করে সালথায় নজিরবিহীন সহিংসতায় সালথা উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বরকে অভিযুক্ত করে ফরিদপুরের আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন...
>> মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা: উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৩৬ জনের নামে মামলা
>> মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা: সেই চেয়ারম্যানসহ কারাগারে ১০
>> সালথার সেই উপজেলা চেয়ারম্যানের নামে আরও দুই মামলা
>> সালথার সেই উপজেলা চেয়ারম্যানকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ
>> সালথায় তাণ্ডব: সেই উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৪৮৮ জনের নামে চার্জশিট
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২২
এসআরএস