ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি খলিলুর রহমানকে (৬৮) আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে সাভার এলাকায় র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ এর অভিযানে তাকে আটক করা হয়।
র্যাব জানায়, ২০১৫ সাল থেকে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই খলিলুর পলাতক ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি রাজধানীর দক্ষিণখান, তুরাগ ও উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেন। গ্রেফতার এড়াতে তিনি নিয়মিত বাসা পরিবর্তন ও একা বসবাস করতেন। এমনকি যোগাযোগের জন্য তিনি মোবাইলফোনও ব্যবহার করতেন না।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর ২০১৭ সালের ৯নং মামলার অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা নেত্রকোনার খলিলুর রহমানসহ তার ভাই আজিজুর রহমান, একই এলাকার বাসিন্দা আশক আলী, জানিরগাঁও ইউনিয়নের শাহনেওয়াজ এবং রমজান আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ ধ্বংস করা, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পাঁচজন আসামির মধ্যে খলিলুর রহমান ছাড়া সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং বিচারকালীন চারজনেরই বিভিন্ন সময়ে মৃত্যু হয়।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের ৪টিতে মৃত্যুদণ্ড ও ১টিতে ১০ বছরের সাজা ঘোষণা করেন। এরপর র্যাব মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত পলাতক আসামিকে গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ায়। যার ধারাবাহিকতায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক খলিলুর রহমানকে সাভার থেকে আটক করা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ২০১৫ সাল থেকে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই খলিলুর রহমান পলাতক ছিলেন। ২০১৭ সালে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে গৃহীত হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যায়। এ সময় রাজধানীর দক্ষিণখান, তুরাগ ও উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেন তিনি। গ্রেফতার এড়াতে তিনি নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করত ও একাকী অবস্থান করতেন। এসময় যোগাযোগের জন্য তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না।
কিন্তু মধ্যে মধ্যে পরিবারের সদস্যরা গোপনে তার সঙ্গে দেখা করত। তার ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তারা প্রয়োজনীয় নিয়মিত অর্থ দিতেন। মামলার রায় ঘোষণার পর স্থান পরিবর্তন করে সাভারে আত্মগোপন করেন খলিলুর রহমান।
গ্রেফতার খলিলুর ১৯৭১ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ছিলেন উল্লেখ করে র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, যুদ্ধের সময় তিনি রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। পরে চন্ডিগড় ইউনিয়নের আল বদর বাহিনীতে কমান্ডার হন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা থানা এলাকায় অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করা, ধর্ষণের চেষ্টা, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যায় জরিত ছিলেন।
তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগে ২২জনকে হত্যা, ১জনকে ধর্ষণ, ১জনকে ধর্ষণের চেষ্টা, অপহৃত ৪ জনের মধ্যে দুজনকে ক্যাম্পে নির্যাতন, ১৪-১৫টি বাড়িতে লুটপাট ও ৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২
পিএম/এসএ