ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গ্রাহক প্রতি ১৫টির বেশি সিম, সেবাদানে জটিলতা

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
গ্রাহক প্রতি ১৫টির বেশি সিম, সেবাদানে জটিলতা

ঢাকা: সরকারি নিয়মে একজন গ্রাহকের নামে সর্বোচ্চ ১৫টির বেশি সিম না দেওয়ার কথা থাকলেও গ্রাহক পরিচয় শনাক্তের বিভিন্ন পরিচিতি নম্বর নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। একজন গ্রাহকের ১৫টির বেশি সিম থাকায় একজনের সিম ব্যবহার করে অন্যজনের অপরাধ সংঘটন, অপরাধী শনাক্তে জটিলতার পাশাপাশি নাগরিক সেবাদানেও জটিলতার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি।

এ অবস্থায় সিম সংখ্যা ১৫টির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে গ্রাহক পরিচয় শনাক্তের বিভিন্ন পরিচিতি নম্বরের (এনআইডি, জন্মনিবন্ধন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পাসপোর্ট নম্বর) ম্যাপিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বিটিআরসির এক কমিশন সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের একজন কর্মকর্তা। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সিমের সংখ্যা ১৫টির মধ্যে নিয়ে আসার লক্ষ্য ঠিক করেছে বিটিআরসি। এরই মধ্যে সিম সংখ্যা ১৫টির মধ্যে রাখতে অপারেটরদের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

কমিশনের মতে, এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে গ্রাহক প্রতি সিমের সংখ্যা নির্দিষ্টকরণের পাশাপাশি সঠিক ডাটাবেজ তৈরি হবে।

বিটিআরসির এ সংক্রান্ত কার্যপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে এবং দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডারের সাথে যাচাই করে প্রতিটি সিম ব্যবহারকারীর পরিচিতি নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসি ২০১৪ সাল থেকে সব মোবাইল অপারেটরের সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করে। পরবর্তীতে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের সভাপতিত্বে সভায় ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে সব মোবাইল ফোন অপারেটরকে বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনসহ অনলাইনে জাতীয় পরিচপত্রের তথ্য যাচাই করে সিম নিবন্ধনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এজন্য মোবাইল অপারেটরগুলো গ্রাহকের সিম নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচিতি নম্বর যাচাইয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনের এনআইডি ডাটাবেজের মাধ্যমে গ্রাহকের এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট যাচাই করে থাকে, যা পরবর্তীতে তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণ করা হয়।

সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর বিটিআরসি থেকে এক নির্দেশনায় একজন গ্রাহকের সর্বোচ্চ ১টি সিম নিবন্ধনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বর্তমানে একজন গ্রাহক এনআইডির নম্বর অথবা জন্মনিবন্ধন সনদের নম্বর অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্সের নম্বর বা পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে পারেন।

বিটিআরসির নথিতে দেখা যায়, নির্বাচন কমিশন ১৭, ১৩ এবং ১০ ডিজিটের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে থাকে। ১৩ ডিজিটের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের আগে গ্রাহকের জন্ম সাল যুক্ত করে ১৭ ডিজিটের এনআইডি নম্বর গঠিত হয়।

ইতোপূর্বে সিবিভিএমপি সল্যুশনে ১৭ ডিজিট ও ১০ ডিজিটের এনআইডি নম্বর এবং জন্ম নিবন্ধন নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্সের নম্বর, পাসপোর্টর নম্বরের মধ্যে ম্যাপিং না থাকায় একজন গ্রাহকের পক্ষে (১৫+১৫+১৫+১৫) ৭৫টি সিম নিবন্ধনের সুযোগ ছিল। ২০২১ সালের ১৬ মার্চ জন্ম নিবন্ধন নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্সের নম্বর, পাসপোর্টর নম্বর ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ২টি সিম নিবন্ধনের বিষয়ে কমিশন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ অবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতিতে সিবিভিএমপি সল্যুশনে ১৭ ও ১০ ডিজিটের এনআইডি নম্বর এবং জন্ম নিবন্ধনের নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্সের নম্বর এবং পাসপোর্টর নম্বরের মধ্যে ম্যাপিং না থাকায় একজন গ্রাহকের পক্ষে ৩৬টি (১৫+১৫+২+২+২) সিম নিবন্ধন করা সম্ভব।

বিটিআরসি জানায়, বিভিন্ন ধরনের পরিচিতি নম্বরের মধ্যে ম্যাপিং না থাকায় গ্রাহক প্রতি সর্বোচ্চ ১৫টি সিম অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সরকারের নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন করা সম্ভব হচ্ছে না। একজন গ্রাহকের কাছে প্রকৃতপক্ষে কতটি সিম আছে, তা নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। সিম ব্যবহার করে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীকে সনাক্ত করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। একজনের নামে নিবন্ধিত সিম অন্যজন ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত করছে। সরকারের বিভিন্ন নাগরিক সেবাদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে সঠিক তথ্য প্রদান করা সম্ভব হবে না।

নির্বাচন কমিশনে সংরক্ষিত তথ্য উপাত্ত যাচাইয়ের জন্য গত ১৭ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন, বিটিআরসি এবং চার মোবাইল অপারেটরের মধ্যে চুক্তি সই হয়। চুক্তির আওতায় সিবিভিএমপি সল্যুশনে রক্ষিত ১৭ ডিজিটের এনআইডি নম্বরের সাথে ১০ ডিজিটের এনআইডি নম্বর ম্যাপিং করার ব্যবস্থা রাখা হয়। ২১ এপ্রিল শুরু হয়ে ১৮ মে ম্যাপিংয়ের প্রাথমিক ধাপ শেষ হয়।

ম্যাপিং কার্যক্রমের পর সিবিভিএমপি সল্যুশনে রক্ষিত প্রায় ৯ কোটি ৮৬ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৮টি এনআইডির মধ্যে ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৩৫ হাজার ৯৬২টি এনআইডির তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট এনআইডির তথ্য পর্যালোচনা চলমান। সেই তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯২৩টি এনআইডর বিপরীতে ১৫টির অধিক সিম রয়েছে, যা পর্যালাচনাকৃত এনআইডির ডাটার প্রায় ০.৯৫ শতাংশ।

বিটিআরসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সিবিভিএমপি সল্যুশনে রক্ষিত যে সব এনআইডির বিপরীতে ১৫টির অধিক সিম নিবন্ধন করা আছে, মোবাইল ফোন অপারেটরদের সাথে আলোচনা করে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা প্রস্তুত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যেসব এনআইডিতে জন্ম তারিখ ভুল থাকার কারণে ম্যাপিং করা যায়নি, তা সংশোধনের লক্ষ্যে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনা ও প্রয়োজন হলে নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।