ঢাকা: গোপন রোগের চিকিৎসা, প্রেমিক-প্রেমিকা বশীকরণসহ নানা সমস্যার সমাধানে কবিরাজি সেবার বিজ্ঞাপন দেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এমনকি প্রয়োজনে ভার্চ্যুয়ালি যোগাযোগ করে সেবা দিয়ে হাদিয়ার নামে অর্থ নেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে।
কবিরাজির মাধ্যমে প্রতারণা করে প্রায় ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা আত্মসাতের দায়ে ওয়াস কুরুনী (২৪) নামে এ ভণ্ড কবিরাজকে আটক করে করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার (২ নভেম্বর) সকালে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি পাগড়ী, স্বর্ণালঙ্কার, মন্ত্র লেখা কাগজ, দুটি হরিণের চামড়া, বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালি, সিংগা, কড়ি, হাড়ের টুকরা ও নানা সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলি র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
আটক ওয়াস কুরুনীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, কবিরাজ আলী আশরাফ, তান্ত্রিক কবিরাজ এবং হুমায়ুন আহমেদ নামে তিনটি বেনামে ফেসবুক আইডি রয়েছে ওয়াস কুরুনীর। সেসব আইডিতে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের গোপন রোগের চিকিৎসা, দাম্পত্য জীবনের সমস্যা, বিয়ে না হওয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, চাকরি না পাওয়া, জমি-জমার ঝামেলা, কাউকে বশ করার প্রবণতা, বাণ মারার শক্তিশালী মন্ত্র, মামলায় জয়ী হওয়ার মন্ত্র, বিবাহের প্রস্তাব আসার তাবিজ, প্রেম সফল করার তাবিজ, বিয়ে বন্ধ করার তাবিজ, মানুষকে পাগল করার তাবিজসহ বিভিন্ন শিরোনামে বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হতো। এরপর আগ্রহীদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে হাদিয়া হিসেবে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিতেন এ কবিরাজ। অর্থ লেনদেনে মোবাইল ব্যাকিং ও কুরিয়ারের মাধ্যমে স্বর্ণালঙ্কার নিতেন তিনি। এ কবিরাজ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসা পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করতেন। কবিরাজি চিকিৎসা ও তাবিজ গ্রহণের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের প্রলোভনে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন মূল্যবান সম্পদ হাতিয়ে নিতেন তিনি।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, টার্গেট ভিকটিমদের সঙ্গে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে চ্যাটিং ও ভয়েস কলের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে জিনকে উপহার দেওয়ার কথা বলে স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিতেন তিনি। এরপরও হুমকি দিয়ে তিনি ধাপে ধাপে টাকাও আদায় করতেন। কখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখালে ভিকটিমরাও অর্থ দিতে বাধ্য হতেন।
প্রতারণার টাকায় এ ভণ্ড কবিরাজ লৌহজং এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করেন জানিয়ে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, ওয়াস কুরুনী মাদ্রাসা থেকে হেফজ খানা পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তিনি ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে কবিরাজি পেশা শুরু করেন। প্রথমে তিনি যাত্রীবাহী বাসে তাবিজ বিক্রি ও বশিভূত করণের বই বিক্রি করতেন। এরপর তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কবিরাজির নামে প্রতারণা করে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাৎ করতে থাকেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২২
পিএম/আরআইএস