ঢাকা: ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সাইবার সিকিউরিটি আইনও নিবর্তনমূলক বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। এই আইন প্রণয়নের চক্রান্ত রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাসদ আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে নেতারা এ আহ্বান জানান।
বিক্ষোভ সমাবেশে বাসদের নেতারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে লেখক মুশতাককে জীবন দিতে হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজা গত ২ বছর ধরে জেলখানায় বন্দি। সাড়ে ৫ হাজার মামলা এখনও বিচারাধীন। ফলে নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বাতিলের দাবিতে দেশের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার রয়েছে। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাও এই কুখ্যাত আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে। দেশি-বিদেশি নানামুখী চাপে পড়ে সরকার এই দমনমূলক আইনটি বাতিল না করে পরিবর্তনের মাধ্যমে কৌশলে একই ধরনের নিবর্তনমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সোমবার (৭ আগস্ট) মন্ত্রীসভায় এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৬০টি ধারার সবগুলোই নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে থাকবে উল্লেখ করে তারা আরও বলেন, এই আইনে শুধু অজামিনযোগ্য ৮টি ধারা জামিনযোগ্য করা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে শাস্তির মাত্রা কিছুটা কমিয়ে জেল-জরিমানার জায়গায় শুধু জরিমানা করা হয়েছে। ডিএসএ’র ২১ ও ২৮ ধারা দুটি মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানীর হাতিয়ার। নতুন আইনে শাস্তি কমিয়ে এ দুটি ধারাও রাখা হয়েছে। ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারায় ঔপনিবেশিক আমলের ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট বহাল রয়েছে। শাস্তির মাত্রা কমিয়ে এটিও রাখা হয়েছে। বিতর্কিত ৪৩ ধারায় পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তারের অধিকার দেওয়া হয়েছে। ধর্ম অবমাননার নামে ব্লাসফেমি আইনের ধারাটিও নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে থাকবে।
তারা আরও বলেন, আইনমন্ত্রী ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হবে না। যেখানে আইনটিই অপআইন, মানে নিবর্তনমূলক আইন, সেখানে তার প্রয়োগই তো অপব্যবহার ও দমনমূলক হতে বাধ্য। ফলে নতুন আইনের নামে এটি একটি আইওয়াশ মাত্র এবং জনগণের সাথে চরম প্রতারণা।
নেতারা আরও বলেন, বর্তমান সরকার আবারও ক্ষমতায় আসার জন্য ফন্দিফিকির করছে। ক্ষমতায় থেকেই জাতীয় নির্বাচন করার চেষ্টা করছে। ফলে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশের জনগণের যে লড়াই তাকে দমন করার জন্যই সাইবার সিকিউরিটি আইনটি করার চেষ্টা করছে। অতীতের স্বৈরশাসকদের মতোই নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা ও বিরোধী মতকে দমন করার কাজে এই আইন ব্যবহৃত হবে।
এ সময় তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল নিবর্তনমূলক কালাকানগুলো বাতিল ও একই ধরনের দমনমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইন করার সরকারের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস ও সদস্য জুলফিকার আলী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে তোপখানা রোড-পল্টন মোড়-বিজয় নগরসহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সেগুনবাগিচাস্থ বাসদের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
এসসি/এমজে