ঢাকা, বুধবার, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

দেশ থেকে ঘৃণার রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করতে হবে: তথ্যমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৩
দেশ থেকে ঘৃণার রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করতে হবে: তথ্যমন্ত্রী

ঢাকা: আজ বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটি অব্যাহত রেখে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের ঠিকানায় যদি পৌঁছতে হয়, তাহলে দেশ থেকে ঘৃণার রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

রোববার (১৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

১৫ আগস্ট উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় প্রেসক্লাব।

সভায় জামায়াতে ইসলামী এই দেশটাকে চায়নি মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই দেশের পতাকার বিরুদ্ধে, চাঁদ-তারা পতাকার পক্ষে তারা যুদ্ধ করেছিল পাকিস্তানিদের দোসর হয়ে। তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া, তাদেরকে আঁচলের তলায় ছায়া দিয়ে, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করা যদি বন্ধ না হয়, তাহলে দেশকে আমরা স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে পারবো না।

নির্বাচন সন্নিকটে। নানা ধরনের ষড়যন্ত্র খেলাধুলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এগুলো কোনো কিছুই কিছু করতে পারবে না। সেজন্য আজকে যারা ঘৃণার রাজনীতি, অপরাজনীতি করছে এবং বিদেশিদের কাছে ধর্না দিয়ে দেশটাকে বিদেশিদের ক্রিয়াক্ষেত্র বানানোর অপচেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আপনাদের (সাংবাদিক) কথা বলার অনুরোধ জানাই। তাহলেই দেশ সঠিক পথে হাঁটবে এবং আমরা আগামীর স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারবো।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হচ্ছে জিয়াউর রহমান ও তার পরিবার। জিয়াউর রহমান যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিল। সেটির প্রমাণ হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর প্রধান নিয়োগ করেছিল খন্দকার মোশতাক। তার অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন না হলে জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনী প্রধান নিয়োগ করা হতো না।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান যে জড়িত ছিল তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ হচ্ছে, তিনি বঙ্গবন্ধুর সব হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করেছিলেন। বিদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিলেন। দেশত্যাগের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আরও প্রমাণ হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ আইন পাস করা হয়েছিল।

জিয়াউর রহমান নামে যে একজন মানুষ আছে, সেটি পঁচাত্তরের আগে দেশের মানুষ জানতো না। জিয়াউর রহমান নিজের জীবদ্দশায় কখনো বলেননি, তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছেন। ঘোষক তো দূরের কথা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তার হত্যাকারী জিয়াউর রহমানকে নায়ক বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল৷ ঘটনাপ্রবাহ বলে পাকিস্তানিদের অনুচর হিসেবে তিনি (জিয়াউর রহমান) মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। না হলে তিনি কেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর যারা পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিল, তাদের দেশে এনে পুনর্বাসিত করলেন?

মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সমস্ত মানুষ বিএনপিতে যোগদান করেছিল অভিযোগ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাবাও একজন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী মানুষ ছিলেন। স্বাধীনতার পর অনেকদিন তার বাবা সঙ্গে তিনিও (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) আত্মগোপনে ছিলেন। এভাবে নাম ধরে ধরে আমি লজ্জা দিতে চাই না। এগুলোই প্রমাণ করে জিয়াউর রহমান সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। বরং পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করার জন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের অনেকের সাজা হয়েছে, অনেকে বিদেশ পালিয়ে আছে। তাদের ফিরিয়ে এনে সাজা দেওয়া হবে। কিন্তু কোনো দেশ-বিদেশি শক্তি এই হত্যাকাণ্ডের সুক্ষ পরিকল্পনা করেছিল, তাদের এখনো আমরা আইনের আওতায় আনতে পারিনি। এটা আমাদের জাতির জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দরকার।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এক অভিন্ন সত্ত্বা। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি ভাবার সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বলেই আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। তিনি আমাদের চিরঞ্জীব স্মৃতি ও আদর্শ হিসেবে থাকবেন।

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ৷ তিনি একটি দেশের জন্ম দিয়েছেন, একটি জাতির প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হবে, সেটা কেউ ভাবেনি। ইতিহাসে কখনো কখনো রাষ্ট্রপ্রধানদের হত্যার ঘটনা ঘটে৷ কিন্তু পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডে শিশু থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীদেরও হত্যা করা হয়। তার মানে এই হত্যাকাণ্ড শুধু রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার জন্য করা হয়নি। নইলে শিশুদের হত্যা করা হতো না। মানুষ এই হত্যাকাণ্ডের কারণ জানতে চায়। দেশ-বিদেশের কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত, কারা সুবিধাভোগী মানুষ সেটা জানতে চায়।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সেমিনার উপ-কমিটির আহ্বায়ক জুলহাস আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাস চন্দ্র বাদল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ভূঁইয়া, জাতীয় প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৩
এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।