ঢাকা: ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে তার সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকেই হত্যা করা নয়, তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর্যন্ত জাতির পিতার রক্তের উত্তরাধিকারী শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক লড়াই করতে হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) জিপিও মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকীতে জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, সুখীসমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে চূড়ান্ত বিজয়ে রূপান্তরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু গবেষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (অব.), বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হারুনুর রশিদ বক্তব্য দেন।
সত্তরের দশকের শুরুতে স্বাধীনতার প্রাক্কালে মন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র হিসেবে তার দেখা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চালচলনকে চিরায়ত বাংলার অতি সাধারণ একজন মানুষের সাথে তুলনা করেন। বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা হলেও তার বিভাগের শিক্ষকদের অনেকেই জানতেন না তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তিনিও নিজের পরিচয় কখনো প্রকাশ করতেন না যে তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এটাই ছিল সন্তানদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের নতুন লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার। স্মার্ট বাংলাদেশ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ার চূড়ান্ত পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
কাজী সাজ্জাদ জহির তার গবেষণালব্ধ বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপনা পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ঘটা লোমহর্ষক কয়েকটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূট্টো একাত্তরের রণাঙ্গন থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য একটি চিঠিতে স্বাক্ষরের জন্য চাপ প্রয়োগ করেও বঙ্গবন্ধুকে তার মানুষদের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি থেকে বিচ্যুত করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন নীতি ও আদর্শে অবিচল একজন মহান নেতা। বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে সামরিক ট্রাইব্যুনালে প্রদত্ত রায় অনুযায়ী ফাঁসি প্রদানের আয়োজন চূড়ান্ত করা হয়েছিল। তার কবর খনন করা হয়েছিল। তাতেও বঙ্গবন্ধু বিচলিত হননি। সে সময় জার্মানসহ বিভিন্ন দেশ বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দণ্ডাদেশ স্থগিত করতে টেলিগ্রাম বার্তা পাঠায় বলে জানান সাজ্জাদ জহির।
তিনি বলেন, ভূট্টো এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দেন এবং মুক্তির পর বঙ্গবন্ধুর হাত খরচা হিসেবে তাকে পঞ্চাশ হাজার ডলারের একটি উপহার বক্স অফার করেন। কিন্তু জাতির পিতাকে ভুট্টো সাহেবের কোনো প্রস্তাবই রাজি করাতে কাজ করেনি। জাতির পিতা বাঙালির স্বার্থ বিরোধী কোনো কিছুই করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এমনকি এতে যদি তার মৃত্যু হয় তাও তিনি হাসি মুখে বরণ করবেন বলে জানান।
সাজ্জাদ জহির বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ডালিমকে পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম একজন বিশ্বাসঘাতক আখ্যায়িত করে বলেন, ডালিম বঙ্গবন্ধুর বিশেষ অনুকম্পায় লন্ডনের উন্নত একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়। বঙ্গবন্ধু নিজের পকেট থেকে তাকে চিকিৎসার অর্থ প্রদান করেন। শুধু তাই নয় চিকিৎসার জন্য ডালিমের পুলিশ অফিসার শ্বশুরকে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে কাউন্সিলর পদে প্রেষণে নিয়োগ প্রদান করেন। অথচ ডালিম এর প্রতিদানে যা করেছে তা বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাসে নজিরবিহীন। ডালিমের বিশ্বাসঘাতকতার কাছে মীরজাফর কিছুই না বলে মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে জেল খানায় হত্যার ষড়যন্ত্রও সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে গোপনে সতর্ক করার জন্য একজন পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনকে জীবন হারাতে হয়েছে জানান সাজ্জাদ জহির।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২৩
এমআইএইচ/এমজে