ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সালতামামি

মসনদ থেকে কাঠগড়ায়

খাদেমুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
মসনদ থেকে কাঠগড়ায়

ঢাকা: ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় একটি বছর পার করেছে বাংলাদেশ। রক্তাক্ত এক অধ্যায় পার করে অবসান মিলেছে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার।

ছাত্র-জনতার সফল আন্দোলনের পর বদলে গেছে দেশের প্রেক্ষাপট। দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে শাসন চালানো আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা শুধু ক্ষমতার মসনদ হারায়নি, হাজার হাজার নিরীহ মানুষ হত্যার অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে এখন বিচারের কাঠগড়ায় রয়েছেন। অপরদিকে অন্যায় শাসনের শিকার হয়ে যাদের বিচারের নামে দীর্ঘদিন হয়রানি করা হয়েছে, নিষ্কৃতি মিলছে তাদের। বিদায়ী বছরে তাই রাজনীতির এই পটপরিবর্তনের সঙ্গে সরগরম ছিল আদালতও। ঢাকার অধস্তন আদালতে ঘটে যাওয়া বছরের সেসব কিছু আলোচিত ঘটনা নিয়েই এই আয়োজন।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূসের সাজা, অতঃপর খালাস
বিদায়ী বছরের প্রথম দিনেই ঢাকার শ্রম আদালতে একটি বিতর্কিত রায় হয়। শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল জয়ী ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা। তবে ওইদিনই আপিলের শর্তে জামিন পাওয়ায় কারাগারে যেতে হয়নি তাকে। দণ্ডিত অন্যরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা করেছিলেন। মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ শ্রম বিধিমালা ১০৭ বিধি ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। পরবর্তীতে সেই রায়ের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসসহ দণ্ডিতরা শ্রম অ্যাপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ৭ আগস্ট শ্রম আপিল আদালতের বিচারক এম. এ. আউয়াল তাদের খালাস দেন।

আরেক মামলায় অভিযুক্ত ইউনূস
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের দাবি পূরণ করা সংক্রান্ত ইস্যুতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলায় ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। গত ১ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় চার্জশিট দাখিল করেন সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম ও সাবেক এমডি আশরাফুল হাসানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এরপর গত ৩ মার্চ ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামস জগলুল হোসেনের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান ড. ইউনূস। গত ৬ জুন এই মামলায় তাদের বিচার শুরু হয়। বর্তমানে মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামিপক্ষের করা আবেদনের বিষয়ে আপিল বিভাগে মামলাটি শুনানির জন্য এখনো অপেক্ষমাণ। এ মামলার শুনানিকালে লোহার খাঁচায় দাঁড়ানো নিয়ে একাধিকবার উষ্মা প্রকাশ করেন ড. ইউনূস। গত ১২ ‍জুন তিনি আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি সারাক্ষণই খাঁচার ভিতরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত একজন ব্যক্তি নির্দোষ। নিরপরাধ নাগরিককে কেন পশুর মতো খাঁচার ভিতরে দাঁড়াতে হবে। এটা খুবই অপমানজনক। সবাই মিলে আওয়াজ তুলুন, একটা সভ্য দেশে কেন এমন হবে? যারা আইনজ্ঞ তারা চিন্তা ভাবনা করে দেখবেন, এটা চলবে নাকি সারা দুনিয়ায় সভ্য দেশে যেভাবে চলে সেভাবে চলবে।

সাড়ে তিন দশক পর সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার রায়
১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলেন। বিকাল ৫টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মোটরবাইকে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতের সোনার চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি দৌঁড় দিলে তাকে গুলি করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সগিরা মোর্শেদ সালাম মারা যান। ওই দিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরা মোর্শেদ সালামের স্বামী সালাম চৌধুরী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক জড়িত দুজনকে শনাক্ত করলেও অজ্ঞাত কারণে মিন্টু ওরফে মন্টু ওরফে মরণ নামে একজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজার রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পরের বছর ২৭ আগস্ট জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট। এ মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘদিন পর বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নজরে আনলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর ২০১৯ সালে আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেন উচ্চ আদালত। এই ঘটনার ৩০ বছর পর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চারজনের বিরু‌দ্ধে ২০২০ সালের ১৪ জানুয়া‌রি আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এরপর ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এই মামলায় বিচারকাজ শেষে গত ১৩ মার্চ ঢাকার বিশেষ দায়রা জজ আলী হোসেন দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও তিনজনকে খালাস দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন- শ্যালক আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান ও মারুফ রেজা। আর খালাস পেয়েছেন সগিরা মোর্শেদের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, জা সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহিন ও মন্টু মন্ডল ওরফে কুঞ্জ চন্দ্র মন্ডল।

২৫ বছর পর সোহেল সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায়
বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান নায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন। তবে ২০০৩ সাল থেকে দীর্ঘ ১৪ বছর মামলার কার্যক্রমের উপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ ছিল। ২০১৫ সালে সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। তারও সাত বছর পর ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলার নথি বিচারিক আদালতে ফেরত আসলে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ঘটনার দীর্ঘ ২৫ বছর পর গত ৯ মে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুনাভ চক্রবর্তী রায়ে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী। দণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনই পলাতক। এছাড়া খালাস পান সেলিম খান, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন ও ফারুক আব্বাসী।  

রেনু হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড
২০১৯ সালের ২০ জুলাই রাজধানীর বাড্ডার একটি স্কুলে সন্তানদের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেনু। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু। ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হক ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুইজনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করেন। ২০২১ সালের ১ এপ্রিল ১৩ আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত। এ মামলায় গত ৯ অক্টোবর একজনকে মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ মোরশেদ আলম। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় মোল্লা। আর যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- রিয়া বেগম ময়না, আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন ও আসাদুল ইসলাম। অপরদিকে, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মো. শাহিন, বাচ্চু মিয়া, মো. বাপ্পি, মুরাদ মিয়া, সোহেল রানা, বেল্লাল মোল্লা, মো. রাজু ও মহিন উদ্দিনকে খালাস প্রদান করেন আদালত।

গ্যাটকো-বড়পুকুরিয়াসহ মামলা থেকে খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি
বিগত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আলোচিত কয়েকটি মামলার মধ্যে অন্যতম গ্যাটকো ‍ও বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা। বিগত বছরে এই দুটি মামলায় খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেন বিচারিক আদালত। এর মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানিকে (গ্যাটকো) পাইয়ে দেওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর মামলা দায়েরের দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত ২৪ অক্টোবর মামলাটিতে ১২ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন হয়। ওইদিন মামলার দায় থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (ডিসচার্জ) দেওয়া হয়। অপরদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় দুদক একটি মামলা করে। ১৬ বছর পর সেই মামলায় চারজনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়। ওইদিন একইভাবে মামলা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাসসহ শীর্ষ নেতারা দুর্নীতি, নাশকতা, মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের বিভিন্ন মামলা থেকে খালাস ও অব্যাহতি পান।

মসনদ হারিয়ে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা অপরাধীর কাঠগড়ায়
দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়ে ১৬ বছর দেশ চালানো আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা ছিলেন ফুরফুরে। কিন্তু ছাত্রজনতার ব্যাপক আন্দোলনে সরকার পতনের পর পাল্টে যায় দৃশ্য। শেখ হাসিনার পরিবার ও তার মন্ত্রীসভার অনেক প্রভাবশালী বিদেশে পালিয়ে গেলেও বেশ কয়েকজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি গ্রেপ্তারও হ। যার মধ্যে রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক মন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক মন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী  শহিদুজ্জামান সরকার, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজসহ বেশ কয়েকজন সাবেক এমপি, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়ে ঢাকার নিম্ন আদালতে আসেন। এছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, শহীদুল হক, সাবেক ডিএমপি কমিশনার মুহাম্মদ আছাদুজ্জামান মিয়াসহ, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ বেশ কয়েকজন সাবেক শীর্ষ পর্যায়ের সামরিক-বেসামরিক আমলা, সাংবাদিক, সাবেক বিচারপতি গ্রেপ্তার হন। তাদেরকে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর মধ্যে ঢাকার আদালত থেকে সাবের হোসেন চৌধুরী শুধু জামিন পান। বাকিরা এখনও কারাগারে। প্রায় প্রতিদিনই তাদের কোনো না কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো বা রিমান্ড শুনানির জন্য হাজির করা হয় আদালতে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
কেআই/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।