দলের বাকি সবাই যখন ব্যর্থ, তখন ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হিসেবে অভিভূত হলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ইনজুরিতে পড়েও হাল ছাড়েননি, গড়েছেন রেকর্ড।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের ৩৯তম ম্যাচে আজ মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রান সংগ্রহ করে আফগানিস্তান। জবাব দিতে নেমে ম্যাক্সওয়েল বীরত্বে ১৯ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিশতক করা ম্যাক্সওয়েল অপরাজিত থাকেন ১২৮ বলে ২০১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে। ইনিংসটি তিনি সাজান ১০টি ছক্কা ও ২১টি চারে। অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে ওয়ানডেতে এটাই সর্বোচ্চ স্কোর।
এই মাঠে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড এটি। ২০১৭ সালে ভারতের বিপক্ষে এখানে ২৮১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ডও এটিই। আগের রেকর্ডও ছিল ভারতের মাটিতে। ১৯৯৬ আসরের কোয়ার্টার-ফাইনালে চেন্নাইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৮৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৬ উইকেটে জিতেছিল তারা।
আগে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তানের এক ইব্রাহিম ছাড়া আর কোনো ব্যাটারই সেভাবে সফল হতে পারেননি। বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের প্রথম সেঞ্চুরির মালিক বনে যাওয়া এই ওপেনার অপরাজিত থাকেন ইনিংসের শেষ পর্যন্ত। খেলেন ১৪৩ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ১২৯ রানের অসাধারণ ইনিংস।
ব্যাটিং স্বর্গে ৩৮ রানে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে হারায় আফগানিস্তান। এরপর রহমত শাহকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৮৩ রানের জুটি গড়েন ইব্রাহিম। রহমত ৩০ রানে ফিরে গেলে হাশমতউল্লাহর সঙ্গে রানের চাকা ধরে রাখেন তিনি। ৫২ রানের এই জুটি হওয়ার পর মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হন আফগান অধিনায়ক (২৬)। এরপর দ্রুত আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও মোহাম্মদ নবী ফিরে গেলে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিলেন আফগানিস্তান।
চাপের মুহূর্তে রশিদ খানকে সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়ে ফেলেন ইব্রাহিম। ৫৮ রানের অবিচ্ছিন এই জুটি এসেছে মাত্র ২৮ বলে। ইব্রাহিমকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে ১৮ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৫ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন রশিদ। যার ফলে ৫ উইকেটে ২৯১ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় আফগানিস্তান।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে জশ হ্যাজেলউড দুটি, মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল শিকার করেন একটি উইকেট।
রান তাড়ায় খেলতে নেমে শুরুতেই ট্রাভিস হেডকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। এরপর তিনে নেমে ঝড়ো শুরু করেন মিচেল মার্শ। তবে ১১ বলে ২৪ রান করে নাভিন উল হকের শিকার হন তিনি। ব্যাট হাতে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। ১৮ রানে উইকেট হারান তিনি। মিডল অর্ডারে লাবুশানে ও জস ইংলিশও বিদায় নেন দ্রুত।
এরপর মার্কাস স্টয়নিস ও মিচেল স্টার্ক এসে বিদায় নেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই। পরের গল্পটা কেবলই ম্যাক্সওয়েলের। তাকে সঙ্গ দেন প্যাট কামিন্স। ব্যাট হাতে তিনি টিকে থাকলেও একাই দলকে জেতান ম্যাক্সওয়েল। ৫১ বলে ফিফটি পূর্ণ করা এই ব্যাটার ৭৬ বলে তুলে নেন হান্ড্রেড। শতক হাঁকিয়ে পড়েন ইনজুরিতে।
কিন্তু ইনজুরিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লড়তে থাকেন তিনি। দেড়শ পূর্ণ করেন ১০৪ বলে। তারপরও থামেননি, ব্যাট চালিয়ে গড়েন রেকর্ড। ৪৭তম ওভারে এসে আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন তিনি। মুজিবের করা ওভারটির প্রথম বলে রান করতে না পারলেও দ্বিতীয় বলে ম্যাক্সওয়েল হাঁকান ছক্কা। পরের বলেও একই কাজ করেন তিনি। চতুর্থ বলে চার রান নেওয়ার পর পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি জেতান দলকে। তাকে সঙ্গ দেওয়া প্যাট কামিন্স ৬৮ বলে ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন।
আফগানিস্তানের পক্ষে দুইটি করে উইকেট পান রশিদ খান, নাভিন উল হক ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২৩
আরইউ