ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

এক জোড়া ব্যাগি গ্রিন

নাজমুস সাকিব রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১
এক জোড়া ব্যাগি গ্রিন

বিশ্ব ক্রিকেটে ক্রীড়াবিদদের একটা বড় অংশই তিরিশের পরে ঝরে পড়েন। এই সময়টায় মূলত শরীর-ফিটনেস-পারফরম্যান্স সবকিছুই তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।

মাঠে একেকটা পা ফেলতেও যেন ভয় লাগে। এরপর তারা অবসর নেন। কেউ কেউ মিডিয়াতে যুক্ত হন। ধারাভাষ্য দেন। আলোচনা করেন। লিখেন। একদিন বের হয় আত্মজীবনী। কখনো এগুলো মুহূর্তেই বেস্টসেলার হয়ে যায়। স্পোর্টসম্যানের আত্মজীবনী মানেই যেন আরেকজনের চরিত্র উন্মোচন। এই লেখায় দুজন ক্রিকেটারের আত্মজীবনী নিয়ে কিছু কথা থাকলো। দুটোই অন্যরকম। দুটো বইয়েই জড়িয়ে আছে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ। সবুজ ঘাস। আর ঝকঝকে রোদ।

১/ লাইন অ্যান্ড স্ট্রেংথ (২০০৮)

'লাইন অ্যান্ড স্ট্রেংথ', সাবেক ফাস্ট বোলার গ্লেন ম্যাকগ্রার আত্মজীবনী।  এই বইয়ের সহলেখক সিডনি শহরের একজন জার্নালিস্ট। ডেনিয়েল লেন। অনেক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। অলিম্পিক কাভার করায় ডেনিয়েলের খুব সুনামও রয়েছে। কিন্তু ম্যাকগ্রার সাড়ে চারশ পৃষ্ঠার আত্মজীবনী যেন খেলোয়াড়ি জীবনের মতোই। তার ডেডিকেশন, স্কিল, কিশোর বয়স—সবই যেন পরিণত।

ফাস্ট বোলার হয়ে চারটা বিশ্বকাপ খেলেছেন ম্যাকগ্রা। জিতেছেন তিনবার। আশেজ তো অবশ্যই। অগণিত পরিসংখ্যান ও জয়কীর্তি তার। কিন্তু সেসব কম, আত্মজীবনীতে এসেছে বরং তার বড় স্বপ্ন দেখার গল্প। স্ট্রাগল। ক্রিকেটের বাইরের জীবন। প্রথম স্ত্রী জেনের সঙ্গে তার পরিচয়ের মুহূর্ত। ব্রেস্ট ক্যান্সার জেনেও তাকে বিয়ে করা। আর অবশ্যই লেজেন্ড হওয়ার গল্প।

ডেনিয়েল লেন 'লাইন অ্যান্ড স্ট্রেংথ' লিখেছেন থার্ড পারসনে। কিন্তু ম্যাকগ্রার জীবনের গল্প বলে যাওয়ায় তা কোনো বাধা দেয় না। সমালোচকরা অবশ্য বইয়ের এই দিকটির সমালোচনা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, অনেকগুলো অধ্যায় এসেছে অহেতুক। সেসব না থাকলেও কোনো ক্ষতি হত না। অবশ্য পুরো বইয়ে ম্যাকগ্রাকে পড়া যায় একটানে।

'লাইন অ্যান্ড স্ট্রেংথ' প্রকাশ করেছে র‍্যান্ডম হাউজ। ম্যাকগ্রার এই আত্মজীবনীতে নেই ক্রিকেটের খুঁটিনাটি। বিশেষ করে যে অপরাজিত  দলটির তিনি সদস্য ছিলেন, তাদের নিয়েও কাটাছেঁড়া করেননি। এটাকে বলা যায়, খুব ব্যক্তিগত একটা বই। ব্যক্তিগত গ্লেন ম্যাকগ্রা। যিনি লক্ষ্যে স্থির ছিলেন, হৃদয়ে সাদাসিধে। জীবন তাকে ডেকে নিয়ে গেছে অন্য সময়ে।  

২. অ্যাট দ্য ক্লোজ অব প্লে (২০১৩)

রিকি পন্টিংকে নিয়ে বলা হয়, ভালোবাসুন অথবা ঘৃণা করুন—ক্রিকেট ইতিহাসে তিনি একজনই। মার্ক টেলর থেকে মাইকেল ক্লার্ক পর্যন্ত পন্টিংয়ের ক্যারিয়ার। এর মধ্যে অনেকগুলো স্মরণীয় অ্যাশেজ। টেস্ট ম্যাচ। একটা অপরাজিত দলের অধিনায়ক হয়ে দুটো বিশ্বকাপ জয়। তারপর একসময় সরে আসা। এটুকুই যেন একটা আত্মজীবনীর জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু 'অ্যাট দ্য ক্লোজ প্লে'তে পন্টিং যেন ফিরে দেখলেন আরেকবার, তার ফেলে আসা ক্যারিয়ার। আরেকবার যেন তিনি স্লিপে ক্যাচ ধরতে দাঁড়িয়েছেন। তবে এবার শুধু খেলাটা নয়, জীবনটাও দেখছেন শিকারির মত।

পারিবারিকভাবে ক্রিকেট খেলেছেন পন্টিং। তার বাবা, মামা ভালো ক্রিকেট খেলতেন। মা খেলতেন 'ভিগেরো'। ভিগেরো একটা অস্ট্রেলিয়ান খেলা, এটা ক্রিকেটের কাছাকাছি—কিন্তু ক্রিকেট না। হাইস্কুল লাইফ থেকে আলোচনায় ছিলেন পন্টিং। আত্মজীবনীর শুরুতে যুক্ত করেছেন একটা রুটিন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ব্যাটিং করতে নামলে রুটিনটা ফলো করতেন তিনি। জানিয়েছেন, একটা সেঞ্চুরির লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামা হত তার।

পন্টিংয়ের বইটি প্রকাশ করেছে বিখ্যাত প্রকাশনী সংস্থা হারপার কলিন্স। প্রায় সাতশ পাতার এই আত্মজীবনী পন্টিং উৎসর্গ করেছেন কয়েকজনকে। যেমন, স্ত্রীকে, দুই কন্যাকে, বাবা, মাকে। ভাই, বোনকে। বইয়ে তিনি অকপটে জানিয়েছেন জয়-পরাজয় নিয়ে। ফর্মহীনতা সম্পর্কে। দলে তার রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে। এছাড়া তার চরিত্রের অন্য আরেকটা জগত তো আছেই। সব কিছু নিয়েই মুখ খুলেছেন পন্টিং। কথা বলেছেন অনবদ্য সেন্স অব হিউমারের সঙ্গে। তার এই গুণটিই অ্যাট দ্য ক্লোজ প্লের ইউএসপি।

লেখক : গল্পকার, গণমাধ্যমকর্মী

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১
এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।