ঢাকা: শিরোপা প্রত্যাশী স্বাগতিক ব্রাজিল মঙ্গলবার রাতে ৭-১ গোলে জার্মান বুলডোজারে পিস্ট হওয়ার পর অনেক আর্জেন্টাইন সমর্থক আরেকটি ইউরোপীয় ঝড়ের আশঙ্কায় ভুগছেন। তবে, প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস হলেও লাতিন আমেরিকান দলটির জন্য আশার খবর হলো, আর্জেন্টিনা কখনোই সেমিফাইনালে হারেনি।
পরিসংখ্যান বলছে, এর আগে চারবার সেমিফাইনালে উঠেছে ম্যারাডোনা-মেসির দেশ, চারটিতেই জয়লাভ করে ফাইনাল খেলেছে তারা। এরমধ্যে দুইবার চ্যাম্পিয়ন এবং দুইবার রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে আর্জেন্টিনা।
১৯৩০ সালের প্রথম সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ওই ম্যাচে মার্কিনিদের ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করে আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টাইনদের প্রতিপক্ষ ছিল আরেক লাতিন আমেরিকান পেরু, এই ম্যাচেও প্রতিপক্ষকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। সেবার প্রথমবারের মতো শিরোপাও ঘরে তুলে আর্জেন্টাইনরা। আর ১৯৮৬ সালের প্রতিপক্ষ বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপায় চুমু খান ম্যারাডোনারা। আর সর্বশেষ ১৯৯০ সালে প্রতিপক্ষ ইতালিকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে ম্যারাডোনার দল।
ফুটবলবোদ্ধাদের ধারণা, সবকিছু ঠিক থাকলে সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডস বাধা পেরিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করবে মেসির আর্জেন্টিনা।
তাছাড়া, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের ভবিষ্যৎদ্রষ্টা সফটওয়ার ‘কোরতানা’ও বলছে সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে হারাবে আর্জেন্টিনা। এর আগে, কোরতানার পক্ষ থেকে বলা হয়, জার্মানি হারাবে ব্রাজিলকে। যেহেতু প্রথম সেমিফাইনালের ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গেছে, তাই এখন আর্জেন্টাইনরা স্বপ্ন বুনতেই পারেন।
বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, সফটওয়ারটি সুপার সিক্সটিন ও সুপার এইটের ম্যাচগুলো নিয়ে যে পূর্বাভাস দিয়েছে, সে ১২টি ম্যাচের মধ্যে ১১টির ভবিষ্যদ্বাণীই সঠিক হয়েছে। যা গত বিশ্বকাপের ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে হিরো বনে যাওয়া অক্টোপাস ‘পল’কেও হার মানিয়েছে।
শক্তির বিচারেও পিছিয়ে নেই আর্জেন্টিনা। এ দলে রয়েছেন একজন লিওনেল মেসি। যিনি একাই গড়ে দিতে পারেন ম্যাচের পার্থক্য। তাছাড়া, গত দুই ম্যাচে ফর্মে ফেরার আভাস দিয়ে দুর্দান্ত খেলেছেন আরেক স্ট্রাইকার গঞ্জালো হিগুইন। গোলও পেয়েছেন তিনি।
মাঝমাঠে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার অনুপস্থিতি আর্জেন্টিনাকে কিছুটা দুশ্চিন্তায় ফেললেও সুখবর হচ্ছে সেমিফাইনাল ফিরছেন আরেক তারকা স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরো। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে জ্বলে উঠতে না পারলেও বাঁচা-মরার এ লড়াইয়ে তিনি নিজেকে ফিরে পেতে চাইবেন এমন প্রত্যাশা আর্জেন্টাইনরা করতেই পারে।
এদিকে, আর্জেন্টিনার ডিফেন্স নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও বাস্তবতা হলো তারাই এখন পর্যন্ত এবারের আসরে সবচেয়ে কম গোল খেয়েছে। গত পাঁচ ম্যাচে মাত্র তিনগোল খেয়েছে আর্জেন্টিনা। তাছাড়া হাভিয়ের জাবালেতা, মার্কোস রোহোদের ডিফেন্স এবং মাঝমাঠের হাভিয়ের মাসেরানোকে মিলিয়ে আর্জেন্টিনার রক্ষণ এখন অনেকটাই লড়াকু।
বর্তমান বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোর পরিসংখ্যানও কথা বলছে আর্জেন্টিনার পক্ষেই। গ্রুপ পর্বের সবগুলো ম্যাচ জিতেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় রাউন্ডে সুইজারল্যান্ড এবং কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামকে অনায়াসে হারিয়েই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে তারা।
অপরদিকে, গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে স্পেনকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিলেও ডাচদের সেই ছন্দ পরবর্তীতে খুব একটা দেখা যায়নি। গ্রুপ পর্ব ভালোভাবে পার হলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে মেক্সিকোর কাছে হারতে হারতে অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি ভাগ্যে জিতে যায় ডাচরা। কোয়ার্টার ফাইনালে দুর্বল কোস্টারিকার সঙ্গে জিতে টাইব্রেকার ভাগ্যে। এদিন দলের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড এবং দলীয় অধিনায়ক রবিন ফন পার্সি অসংখ্য গোলের সুযোগ মিস করেন।
নেদারল্যান্ড দলে রয়েছেন ‘গতিদানব’ অ্যারিয়েন রোবেন, পার্সি ও স্নেইডারের মত খেলোয়াড়রা। সুতরাং লড়াইটা বেশ জমজমাট বলাই যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৪