কলকাতা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জাতীয় কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য, যা নিয়ে শোরগোল পড়েছে ভারতজুড়ে। কংগ্রেস নেতার অভিমত, ব্যক্তিগত ইগোর কারণে দল থেকে মমতাকে সরানোর জন্যই কংগ্রেসের আজ এই হাল!
দল সেই ভুলের ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করছে বলেও মন্তব্য করেন প্রদীপ ভট্টাচার্য।
গত রোববার (৫ জানুয়ারি) পশ্চিমবঙ্গের সাবেক কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরেক সাবেক সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, যেদিন বাংলার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে বহিষ্কার করা হয়, তখন সোমেন মিত্রকে ফোন করেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় কংগ্রেস সভাপতি সীতারাম কেশরী। তিনি বলেছিলেন —‘সোমেন, ওকে (মমতা) তোমার বহিষ্কার করতেই হবে’। তখন আমি সোমেনকে বলেছিলাম—‘তুমি এটা করতে যেও না’। কিন্তু সোমেনের ওপরে এমন চাপ তৈরি হয়েছিল যে, সে করতে বাধ্য হয়েছিল। আর সেই ঐতিহাসিক ভুলের প্রায়শ্চিত্তটা জাতীয় কংগ্রেসকে আজও করতে হচ্ছে। আমি জানি না, এর হাত থেকে আমরা কবে, কীভাবে নিস্তার পাব।
প্রায় তিন দশক আগে কংগ্রেস এবং তৎকালীন কংগ্রেস যুবনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে ঠিক কী ঘটেছিল, তা আজ সকলেরই জানা। যুবনেত্রী মমতার জনপ্রিয়তা সিঁড়ি বেয়ে শীর্ষে চলে যাওয়ার পর সোমেন মিত্র ভার্সেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোরা দ্বন্দ্ব দলের নজরে আসে। তৎকালীন কংগ্রেস দিল্লি থেকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়, মমতাকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করে সোমেনকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এসবের নেপথ্য নায়ক ছিলেন সীতারাম কেশরী।
১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ভেঙে জন্ম নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। ভেঙে যাওয়ার ২৭ বছর পর আক্ষেপ করলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের সাবেক কংগ্রেস সভাপতির ‘প্রায়শ্চিত্ত’ মন্তব্য কংগ্রেসের অন্দরে বিতর্ক চরমে তুলেছে, যা খুব একটা ভালোভাবে দেখছে না দিল্লি কংগ্রেস।
তার ওপর সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূল প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রদীপের কথাতেই সিলমোহর দিয়েছেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নে মমতা বলেছেন, ‘ঠিকই তো বলেছেন’। অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বহিষ্কার করার জেরেই আজও খেসারত দিতে হচ্ছে জাতীয় কংগ্রেসকে। কংগ্রেস আজও তার প্রায়শ্চিত্ত করছে!
প্রদীপ ভট্টাচার্য এ কথা বলার পর থেকেই জাতীয় কংগ্রেসের অন্দরে তুষের আগুন জ্বলছে। এর কারণ সকলেই জানে বাংলায় জাতীয় কংগ্রেসের অবস্থা কতটা শোচনীয়। কর্মী-সমর্থক নেই বলে গত ২৫ বছর ধরে বড় ধরনের কর্মসূচি নিতে পারেনি কংগ্রেস। বিশেষ কয়েকটি অঞ্চল বাদ দিলে একই অবস্থা ভারতজুড়ে কংগ্রেসের।
প্রসঙ্গত, প্রদীপ ভট্টাচার্য লোকসভার সাবেক সংসদ সদস্য এবং রাজ্যসভার সাবেক সাংসদ। কংগ্রেস আমলে রাজ্যের মন্ত্রীও ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে পশ্চিমবাংলায় যখন মমতা ক্ষমতায় আসেন সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতিও ছিলেন তিনি। সেইবার তার নেতৃত্বে বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের জোটসঙ্গী ছিল জাতীয় কংগ্রেস। তৃণমূলের সহায়তায় ২০১৭ সালে কংগ্রেসের হয়ে রাজ্যসভায় সাংসদ হন প্রদীপ। এবার সেই প্রদীপ পেয়ে গেলেন তার বক্তব্যের সিলমোহর। তাও আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে। আর এর জেরেই শোরগোল! তাহলে কি প্রদীপ যোগ দেবেন তৃণমুলে? নাকি আবার একবার জোটসঙ্গী হয়ে বিজেপিকে পরাস্ত করবে? কারণ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট হতে আর বাকি ১৫ মাস।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ