ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘ওয়াসাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত’

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
‘ওয়াসাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত’

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে ঢাকা ওয়াসাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।

তিনি বলেছেন, নগরবাসীর জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ওয়াসাকে ডিজিটাইজড করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকাকে ১৪৫ ভাগে বিভক্ত করে পানি বণ্টনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পানির সিস্টেম লস কমিয়ে আনা হয়েছে। একসময় বিলের ৩৬ শতাংশ জলে গেলেও এখন আদায় হয় শতভাগ।

মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ওয়াসা ভবনের নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকে তাকসিম এ খান এসব কথা বলেন।

তবে ওয়াসাকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রচেষ্টার মধ্যেই একটি স্বার্থান্বেষী মহল পেছনে লেগেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ওয়াসা এমডি বলেন, ‘সরকারের অর্জন ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্রকারীরা তৎপর রয়েছে। ওয়াসার বিরুদ্ধেও মিথ্যাচারে মেতেছে চক্রটি। আমার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কেনার মতো জঘন্য মিথ্যাচার তারই অংশ। ১৪টি বাড়ি কেনার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তা ডাহা মিথ্যা, বানোয়াট গল্প ও হাস্যকর। গত ১৩ বছরে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুর্নীতির অভিযোগ তুললেও কোনোটিই প্রমাণিত হয়নি। সরকারের অর্জনগুলো যারা স্বীকৃতি দেয় না, বরং ধ্বংস করতে চায়, তারাই এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। ’

অর্থপাচারে জড়িত নই দাবি করে তাকসিম এ খান বলেন, ‘আমার জীবনের সব উপার্জন হালাল। আমেরিকায় যে আয় ছিল তা-ও হালাল, এখানে যে উপার্জন তা-ও হালাল। আমি কোনো অর্থপাচারে জড়িত নই। দুদক এর আগেও তদন্ত করেছে। তদন্তে এসব অভিযোগ ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। ’

ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বাস্তবায়ন
ওয়াসার এমডি বলেন, ‘ওয়াসা কাজ করে ওয়াসা অ্যাক্ট-১৯৯৬ অনুসারে। এই আইনের আওতায় বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা, চট্টগ্রাম ওয়াসা, খুলনা ওয়াসা ও রাজশাহী ওয়াসা কাজ করছে। ভবিষ্যতে যখন শহর বড় হবে, একটি করে ওয়াসা হবে। ১৯৯৬ সালে দেশে প্রথমবারের মতো ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (সায়েদাবাদ-১) করা হয়। আগে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে আমরা পানি সরবরাহ করতাম। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ভূ-উপরিস্থ পানিকে শোধন করার যে সিস্টেম তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রথম করে দেখিয়েছেন। ২০১০ সালে সায়েদাবাদ-২ উদ্বোধন করা হয়। ’

৯৫ শতাংশ স্থানে পানযোগ্য পানি
তাকসিম এ খান বলেন, “২০১০ সালে ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা দুটি মাস্টার প্ল্যান করি। ফলে রাজধানীতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ২০০৮-০৯ সালে ঢাকা শহরে পানির হাহাকার ছিল। ওই সময় মাত্র ৬০ শতাংশ নগরবাসী পানি পেতেন। তখন ঢাকা শহরে প্রায় এক কোটি ৭৫ লাখ মানুষ ছিল। পানি না পেয়ে ওই সময় কলসি মিছিল ও ঝাড়ু মিছিলও হতো। বর্তমানে টেকনিক্যাল ফল্ট ছাড়া শতভাগ পানি পাচ্ছে সবাই। ’

তিনি আরও বলেন, এখন ৯৫ শতাংশ জায়গায় পানযোগ্য পানি। বাকি ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও পানির পাইপ ফেটে যায়, ময়লা ঢোকে। কোনো কোনো স্থানে সমস্যা হলে ১৬১৬২ নম্বরে কল করলে তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয়।

আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার পরিবেশবান্ধব নয়। বেশি বেশি পানি উত্তোলন করলে ভূমিধস হতে পারে। এজন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে—‘৭০ শতাংশ পানি আমাদের আসবে সারফেস থেকে। বাকি ৩০ শতাংশ আসবে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে। আমরা সায়েদাবাদ-২, পদ্মা জশলদিয়া, ভাকুরদা, সায়েদাবাদ-৩ শুরু করেছি, যা শেষ হয়নি; গন্ধবপুর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট করা হচ্ছে।

সব স্থানে পানযোগ্য পানি সরবরাহের ডিএমএ ব্যবস্থা
আগে পুরো ঢাকা একটি নেটওয়ার্কে ছিল। এখন আমরা ঢাকাকে ডিস্ট্রিক মিটার এরিয়া (ডিএমএ) অনুসারে ১৪৫ ভাগে বিভক্ত করেছি। প্রায় ৭০টি ডিএমএ হয়ে গেছে।

পানির সিস্টেম লস কমানো
এমডি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রোগ্রামের মতে, পানির সিস্টেম লস হওয়া উচিত ২৫ শতাংশ। ২০০৯ সালে পানির সিস্টেম লস ছিল ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ। আমাদের টার্গেট ছিল ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। প্রথমে সিস্টেম লস ২০ শতাংশে নামিয়েছি। এরপর ডিএমএ করার পর তা নেমেছে ৫ থেকে ৬ শতাংশে। পানির সিস্টেম লস দুই ডিজিটের নিচে নামার নজির দক্ষিণ এশিয়ার কোনো শহরে নেই। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এটিকে ‘গ্রেট সাকসেস’ বলেছে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি লাঘব
এমডি বলেন, ‘আগে আমাদের বিলের (আয়) ৬৪ শতাংশ টাকা উঠে আসত। এখন রেভিনিউ অর্জন শতভাগ। ওই সময় মোট আয় পাওয়া যেত ৩০০ কোটি টাকা। মূলত আয় হতো ৪৫০ কোটি টাকা, অর্থাৎ ১৫০ কোটি টাকা গায়েব হতো। এখন আয় দুই হাজার কোটি টাকা। এটা দুর্নীতি লাঘবের প্রমাণ। ’

আন্তর্জাতিক মানের আয়-ব্যয় অনুপাত
এমডি বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা ১০০ টাকা আয় করলে ৯৫ টাকা অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্সে ব্যয় করতাম। আন্তর্জাতিক হিসাবে এটি হবে ০.৬৫ শতাংশ। আমরা এখন আন্তর্জাতিক মানের চেয়েও কমে নিয়ে এসেছি। আমরা ১০০ টাকা আয় করলে ৬২ টাকা ব্যয় করি। ’

গ্রাহকের হয়রানি লাঘব
ওয়াসার এমডি বলেন, ‘পানির মিটারে আমরা সিম বসানোর চেষ্টা করছি। মিটার যে রিডিং করতে যান, তিনিই অনেক সময় দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সিম বসানো হলে এক ক্লিকেই গ্রাহক তার বিল যেকোনো স্থান থেকে বের করতে পারবে। ’

সৌজন্য- কালের কণ্ঠ

বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
এমএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।