ঢাকা: পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে শেষ মুহূর্তে ঢাকা ছাড়ছে লাখ লাখ মানুষ। সড়কে যানজটের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হলেও স্বস্তি ছিল রেলে।
এবার ট্রেনের আগাম টিকেটের শতভাগ অনলাইনে বিক্রি ও টিকেট ছাড়া প্ল্যাটফর্মে কাউকে প্রবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ির কারণে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে বেশির ভাগ সময়ই বজায় ছিল শৃঙ্খলা।
ঈদযাত্রার পঞ্চম দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তও সেটি বজায় ছিল। কিন্তু বিকেলে দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেন প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করার পর তা আর নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
শুক্রবার (২১ এপ্রিল) বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলা জামালপুর কমিউটার ট্রেন প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করার পর এতে উঠতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মে স্থিরভাবে দাঁড়ানোর আগেও অসংখ্য যাত্রী এতে উঠে পড়েন। পরে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানোর পর পুরোপুরি ভরে যায় ট্রেনের ভেতরটা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠে পড়েন যাত্রীদের অনেকে।
তবে আজ আর এই যাত্রীদের ছাদ থেকে নামানোর বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
পরে এভাবেই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১৫ মিনিট বিলম্বে বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে স্টেশন থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ট্রেনে ভ্রমণকারী বেশিরভাগ যাত্রীই শ্রমজীবী। আজ থেকে গার্মেন্টসসহ কল-কারখানা ছুটি হওয়ায় পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বাড়ির পথে ছুটছেন তারা।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলা এসব কমিউটার ট্রেনে অগ্রিম টিকেটের ব্যবস্থা নেই। যাত্রার এক থেকে দেড় ঘণ্টা আগে স্টেশনের আলাদা কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে হয় যাত্রীদের।
ভোরে উত্তরবঙ্গগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ও আরেকটি কমিউটার ট্রেনে একইভাবে যাত্রীরা অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায় বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া সকালে থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ দেখা যায়নি। তিন স্তরের টিকিট পরীক্ষা শেষে সুশৃঙ্খলভাবে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে দেখা যায় যাত্রীদের।
আসন সংখ্যার বিপরীতে ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করায় অনেক যাত্রী দাঁড়িয়ে গেলেও গাদাগাদি অবস্থা ছিল না অন্যান্য ট্রেনে। ফলে নিজ বসে আসনে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছিলেন আগাম টিকেট কাটা যাত্রীরা।
তবে এদিকে সকাল থেকে প্রায় সবগুলো ট্রেনই কিছুটা বিলম্বে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। সকাল থেকে চারটি ট্রেনকে ১৫ মিনিট থেকে সোয়া এক ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে যেতে দেখা যায়।
খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা দেরিতে ৯টা ৩০ এ ছেড়ে যায়।
দেওয়ানগঞ্জগামী দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল ৯টা ২৫ মিনিটে। সেটি ছেড়ে যায় প্রায় ২০ মিনিট দেরিতে ৯টা ৪৫ মিনিটে।
এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী তিতাস কমিউটার ১৫ মিনিট বিলম্বে ১০টায়, উত্তরবঙ্গগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা বিলম্বে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং একতা এক্সপ্রেস ৪০ মিনিট দেরিতে ১০টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে যায়।
পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস প্রায় ৪০ মিনিট বিলম্বে ১০টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী রাজশাহী কমিউটার এক ঘণ্টা ৫০ মিনিট দেরিতে ২টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যায়।
তবে অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেসসহ অনেক ট্রেন নির্ধারিত সময়ে স্টেশন ছেড়ে যায়।
এদিকে আজকে আর সকাল থেকে স্ট্যান্ডিং টিকেটের জন্য যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়নি।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, এবার ট্রেনের আগাম টিকিটে শতভাগ অনলাইনে বিক্রি করায় যাত্রীদের ঈদযাত্রা স্বস্তির হয়েছে।
শিডিউল বিপর্যয় ছাড়াই ট্রেনগুলো ছেড়ে গেছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা যাতে না হয়, সেজন্য রেলওয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তীব্র গরমের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ছাড়া বাড়ি ফিরতে পারায় যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে স্টেশন। মূলত শুক্রবার থেকে বেসরকারি অফিস ও বিভিন্ন কল-কারখানায় ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়। এদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া উত্তরবঙ্গগামী কোনো ট্রেনেই ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই। এমনকি ট্রেনের ছাদেও ছিল শত শত যাত্রী। এছাড়া স্ট্যান্ডিং টিকেটের জন্য ছিল যাত্রীদের হাহাকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৩
এসসি/আরএইচ