খুলনা: সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া জমজ দু’ভাইকে টাকা চুরির অপবাদে বাড়িওয়ালাসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন মিলে বৈদ্যুতিক শকসহ নির্যাতন করে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার টাকা চুরির স্বীকারোক্তি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে খুলনা মহানগরীর একজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ১২ বছর বয়সী ওই দু’শিশুকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা দেওয়ার পর শনিবার (৬ মে) খুলনা মেট্রোপলিটন (কেএমপির) সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় এজাহার দায়ের করেছেন ওই দু’শিশুর বাবা স্কুল শিক্ষক মো. নেছার উদ্দিন।
তবে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বাংলানিউজকে জানান, তিনি এখনও নিশ্চিত নন যে, মামলাটি কোন ধারায় রেকর্ড করা হবে।
অপরদিকে, বৈদ্যুতিক শকসহ নির্যাতনের কথা অস্বীকার করার পাশাপাশি টাকা চুরির বিষয়টিকে সামনে এনে নির্যাতনের অভিযোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট বাড়িওয়ালা। বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তৎপর রয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, নগরীর জলিল সরণির একটি ভাড়া বাড়িতে স্কুল শিক্ষক নেছার উদ্দিন ও তার স্ত্রী নাছিমা আক্তার বসবাস করেন। ওই বাড়ির মালিক ঢাকায় থাকার সুবাদে তাদেরই বাড়িটি দেখাশোনা করতে হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার (৪ মে) সন্ধ্যায় বাড়ির মালিক, তার স্ত্রী, ছেলে ও দুই শ্যালিকা এসে ভাড়াটিয়া স্কুল শিক্ষক দম্পতির জমজ শিশু সন্তানকে তাদের বাসায় নিয়ে টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করেন। এক পর্যায়ে তাদের দুই সন্তান মো. রায়হান ইসলাম ও রাহাত ইসলামের শরীরের বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। এর ফলে তারা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয় যে, তাদের বাসা থেকে তারা পাঁচ লাখ ৩০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়েছে। পরে তাদের বাবা-মা ও বোন বাড়িওয়ালার ঘর থেকে জমজ শিশুকে উদ্ধার করে প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। কিন্তু ওই দু’শিশুর মানসিক ও শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় তারা শুক্রবার (০৫ মে) রাতে তাদের মধ্যে রায়হানকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি করেন ও রাহাতকে চিকিৎসা দেন। শনিবার বিকেলে রায়হানকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
শনিবার ঢাকায় অবস্থানকালে বাড়ির মালিক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, তার বাসা থেকে ওই শিশু পাঁচ লাখ ৩০ হাজার টাকা চুরি করেছে। এটি তারা স্বীকার করেছে। এমনকি তারা তাদের বাবা ও মায়ের সঙ্গে সুস্থভাবেই বের হয়ে গেছে। কিন্তু এখন তাদের নির্যাতনের চিহ্ন দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এটি তার বাবা ও মা করতে পারেন বলেও তিনি দাবি করেন।
এছাড়া ওই দুই শিশুর ওপর তারা কোনো নির্যাতন করেননি বলেও তিনি দাবি করেন বাদল চন্দ্র।
এ ব্যাপারে কেএমপির সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, ভিকটিমের বাবা নেছার উদ্দিন শনিবার (৬ মে) একটি এজাহার দিয়েছেন। কিন্তু সেটি কোন ধারায় মামলা রেকর্ড করা হবে সেটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, শিশুরা কোন অপরাধ করলেও তাদের শিশু আইন অনুযায়ী বিচার হবে। কিন্তু তাদের ওপর নির্যাতন, বৈদ্যুতিক শক দিয়ে স্বীকারোক্তি নেওয়াটা অমানবিক এবং আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন, কোনো অবস্থায়ই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। তাছাড়া শিশু নির্যাতন বন্ধে হাইকোর্টের আদেশও আছে। দ্রুত শিশু নির্যাতনকারী অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
এছাড়া মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার পক্ষ থেকে নির্যাতিত শিশুর পক্ষে সর্বোচ্চ আইনি সহযোগিতা দেওয়া হবে বলেও জানান অ্যাডভোকেট মোমিনুল।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২৩
এমআরএম/আরআইএস