সোমাবর (১০ ফ্রেবুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন।
এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর পক্ষে ওয়াজকারী জনৈক মিজানুর রহমান আজাহারী সম্পর্কে ধর্মমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ বলেছেন, আজহারী জামায়াতের পক্ষ হয়ে কাজ করেছেন। আইসিটি আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয় নাই। বরং তাকে নির্বিঘ্নে মালয়েশিয়ায় চলে যেতে দেওয়া হয়েছে। আর শরীয়ত বাউলকে আইসিটি আইনে গ্রেফতার করে জেলখানায় রাখা হয়েছে।
‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের নামে অতীতে যে ধর্মীয় আবরণ দিয়ে দেশকে পাকিস্তানি আদলে ফিরিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা হয়েছিল, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তার ছেদ ঘটানো হয়েছে। কিন্তু সেই প্রচেষ্টার অবসান হয় নাই। রাষ্ট্রীয় প্রচারে, আমাদের আচার-আচরণে, বেশ-ভূষার পরিবর্তনে তার রেশ আমরা দেখি। প্রতিদিনই ফেসবুক, ইউটিউবের নিত্য প্রচারে সেই মনমানসিকতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। ’
তিনি বলেন, শোনা যায়- মাধ্যমিকে শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন করা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে কোথায়ও আলোচনা হয়েছে বলে জানা নাই। বিএনপি-জামায়াত আমলে একমুখী শিক্ষার নামে মাধ্যমিক সাধারণ শিক্ষার অবনমনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। বিজ্ঞান, গণিতকে পিছে ঠেলে ধর্মীয় ও ব্যবসায়ীভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার চেষ্টা হয়েছিল।
‘তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর শাসনামলে সে ধরনের পশ্চাৎগামী ঘটনা ঘটবে না বলে আশা করি। তারপরও এই নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। কিছু করার আগে প্রয়োজন সংসদে আলোচনা। পাঠ্য বইয়ে হিন্দু লেখকদের লেখা তুলে দেওয়া, গল্প-কথা-চিত্রে ধর্মভাবের প্রতিফলনের নতুন সব ব্যবস্থা আমাদের আতঙ্কিত করে। ’
রাশেদ খান মেনন বলেন, ছোটবেলায় আমাদের মধ্যে পাকিস্তানি ভাব আনতে, ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি’, কে ‘সুবেহ সাদেকে উঠে দিলে দিলে বলি, হররোজ আমি যেন ভালো হয়ে চলি’ বলে পড়ানো হতো। সেই ভাবটাই নিয়ে আসা হচ্ছে পাঠ্যবইগুলোতে। বাঙলা, বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য আর পাঠের বিষয়বস্তু না। তাহলে ভাষার মাস বা মুজিব শতবর্ষ উদযাপন কেন?
সম্প্রতি শেষ হওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি এসেছিল। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ভোটের দিন তাদের কোথায়ও দেখা যায়নি। নির্বাচনকে বানচাল করা, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে পেছনে দরজায় ক্ষমতায় যাওয়ার তারা কৌশল নিয়েছে।
‘এটা সত্য যে, ওই নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে খুব কম এসেছে। কিন্তু সেটা কেবল এ কারণেই নয়। আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলের সমর্থকেরাও ভোট দিতে আসেনি। ভোট থেকে মানুষের এই দূরত্ব গণতন্ত্রের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। নির্বাচন তো বটেই, রাজনৈতিক দলগুলোকেও অপ্রাসঙ্গিক করে তুলবে। ’
ব্যাংকিং খাতের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের দুরাবস্থার কথা না বললেই নয়। সরকার এ বছর ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেওয়ার কথা তা অর্থবছরের ছ’মাসেই প্রায় নেওয়া হয়ে গেছে। বেসরকারি খাতে ঋণ ১১ বছরে সর্বনিম্ন। এই ঋণ প্রবৃদ্ধি ৯.৮৩ শতাংশ।
‘ঋণ খেলাপি বাড়বে না বলে অর্থমন্ত্রী যে দাবি করেছিলেন, তা মিথ্য প্রমাণ করে গত একবছরে ২২ হাজার কোটি টাকার ওপর খেলাপি ঋণ বেড়েছে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে যে পদক্ষেপ তিনি (অর্থমন্ত্রী) নিয়েছেন, তা ব্যবসায়ীবান্ধব হলেও, ব্যাংকবান্ধব বা অর্থনীতিবান্ধব ছিল না। গতকালই রিপোর্ট বেরিয়েছে, বাংলাদেশ ঋণখেলাপিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের শীর্ষে, ১১.৪ শতাংশই খেলাপি ঋণ। ’
রাশেদ খান মেনন বলেন, গত ১০ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা; যা দিয়ে অর্থমন্ত্রীর আগামী বছরের বাজেট হয়ে যেত। এই অর্থ পাচারকারী-বেগমপাড়ার মালিকদের নাম প্রকাশ করা হোক। ব্যাংক নিয়ে একটা সমাধানে আসতে ব্যাংক কমিশন গঠন করা হোক।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০
এসকে/এমএ