ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

গ্রিসের তুষারপাহাড়ে চিরতরে থমকে গেলো ফয়সলের স্বপ্নযাত্রা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০
গ্রিসের তুষারপাহাড়ে চিরতরে থমকে গেলো ফয়সলের স্বপ্নযাত্রা

সিলেট: জীবনকে আরও সুন্দর করে সাজাতে দেশের ব্যবসা ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন সিলেটের যুবক এনামুল এহসান জায়গিরদার ফয়সল (২৫)। কিন্তু চিরদিনের জন্য গ্রিসের তুষার পাহাড়ের নিচে চাপা পড়েছে তার সেই স্বপ্ন।

গত শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সাড়ে ১২টার দিকে গ্রিস সীমান্তের ভেতরে এক তুষার পাহাড়ে অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অকালমৃত্যু হয় ফয়সলের। গ্রিস যাত্রায় ফয়সলের সঙ্গীদের একজন পাশ্বর্তী গ্রামের ফয়েজ আহমদ তার স্বজনদের এ খবর জানিয়েছেন।

 

ফয়সলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তার চাচাতো ভাই নজমুল হোসেন জায়গীরদার ফরহাদ বাংলানিউজকে বলেন, ফয়সল গত শুক্রবার মারা গেলেও আমরা মঙ্গলবারে (১১ ফেব্রুয়ারি) সে খবর জানতে পারি।    

নিহত ফয়সলের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে। তার বাবা মুশহুদ আহমদ জায়গীদার। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে ফয়সল ছিলেন দ্বিতীয়।

ফয়েজের বরাত দিয়ে নিহতের স্বজনরা জানান, অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পাহাড়েই মারা যান ফয়সল।  

ফয়সলের পরিবারকে ফয়েজ আরও জানান, দালালদের কারণে ওখান থেকে ফয়সলের মরদেহ আনা সম্ভব হয়নি। তবে জায়গাটি শনাক্ত করে রাখতে গাছের সঙ্গে হাতমোজা ঝুলিয়ে রাখেন তিনি।  

ফয়সলের চাচাতো ভাই নজমুল হোসেন জানান, বালাগঞ্জের বোয়ালজুড় বাজারে ফয়সলের স্টেশনারির দোকান ছিল। সেই ব্যবসা ছেড়ে প্রায় ৫ বছর আগে ওমান পাড়ি দেন ফয়সল। সেখানে তিনি একটি সুপার শপে কাজ করতেন। এরই মাঝে গত ৫ মাস আগে দালালদের মাধমে ওমান থেকে গ্রিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন ফয়সল। মাঝে ৫ মাস তুরস্কে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে শুক্রবার দুপুরে গন্তব্য গ্রিসের সীমানায় ঢুকে মারা যান ফয়সল।  

এদিকে এরই মাঝে ফয়সলের মরদেহের খোঁজে যুক্তরাজ্য থেকে তার চাচা গ্রিসে গিয়েছেন। মরদেহের খোঁজে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেখানকার দূতাবাসের সহযোগীতা চেয়েছেন।  

ফয়সলের মৃত্যুর ঘটনায় বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনহার আলী বাংলানিউজকে বলেন, ফয়সলের মৃত্যুর খবরটি দুঃখজনক। তার মরদেহের খোঁজ মিলছে না। মরদেহ খুঁজতে তার চাচা লন্ডন থেকে থেকে গ্রিসে গেছেন। মরদেহ পাওয়া গেলে তা দেশে আনতে আমরা সব প্রক্রিয়ায় চেষ্টা করবো।  

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র ও দেশে অবস্থানরত ফয়সলের সহপাঠীরা জানান, তার ওমান যাওয়ার নেপথ্যে উদ্দেশ্যে ছিল ইউরোপের কোনো এক দেশে পাড়ি জমানো। তাই উন্নত জীবনের আশায় দালাল মারফত মাস ছয়েক আগে ওমান থেকে ইরান হয়ে তুর্কি পৌছান তিনি। সেখানে ৫ মাসের মতো অবস্থান করে সুযোগ খোঁজেন গ্রিসে প্রবেশের। কিন্তু তার সেই স্বপ্নযাত্রা গ্রিসের তুষার পাহাড়ে চাপা পড়েছে। একমাত্র ফয়সল ছাড়া বহরের বাকি ৯ জনই গ্রীসে পৌঁছেছেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০
এনইউ/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।