ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা

বিদেশে ৩৫ লাখ কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০
বিদেশে ৩৫ লাখ কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ

ঢাকা: এক কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থানের বিশাল চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে যাচ্ছে অষ্টম (২১-২৫) পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এর মধ্যে ৩৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রবাসে, বাকি ৮১ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থান দেশেই সৃষ্টি করা হবে।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মোট কর্মসংস্থানের লক্ষ্য ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ। কিন্তু পাঁচ বছরে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে ৯৫ লাখ। এর মধ্যে দেশে ৬০ লাখ ও বিদেশে ৩৫ লাখ। সেই হিসাবে এবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে প্রায় ২২ লাখ বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।  

এবার পিছিয়ে পড়া জেলাগুলো থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানোর সুযোগ তৈরি করতে সঠিক তথ্য, প্রশিক্ষণ ও অভিবাসন ব্যয় মেটাতে ঋণ সহায়তা দেওয়া হবে।

২০২১ সালে ২১ লাখ ৬০ হাজার, ২০২২ সালে ২২ লাখ ৩০ হাজার, ২৩ সালে ২৩ লাখ ৩০, ২৪ সালে ২৪ লাখ ২০ এবং ২০২৫ সালে ২৫ লাখ ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।  

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) ধাক্কায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ওই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।

মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) শেরে বাংলানগরের এনইসি সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হবে। সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিকল্পনায় করোনা মহামারি থেকে স্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস, কর্মসংস্থান, আয় এবং অর্থনীতি কার্যক্রম আগের ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে গতিময় প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দ্রুত দারিদ্র্য কমানোর দিকে জোর দেওয়া হয়েছে।  

উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণ এবং তা থেকে উপকৃত হওয়া এবং দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক কৌশল নেওয়া হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য পথপরিক্রমা প্রণয়ন, যা হবে দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল ও টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া হবে নতুন পরিকল্পনায়।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে দারিদ্র মোকাবিলায় কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিকে উচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং সুবিধাভোগীদের সংখ্যা বাড়ানো হবে। এসব জেলায় কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং আয় বৃদ্ধির জন্য কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণ সেবার ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।  

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগামী পাঁচ বছরে নতুন এক কোটি ১৬ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে কর্মসংস্থানের এই লক্ষ্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তুলনায় ১৩ লাখ কম। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অনেক লক্ষ্যই পূরণ হয়নি। যেটা অষ্টম পঞ্চম বার্ষিকী পরিকল্পনার মধ্যে ঠাঁই পেয়েছে।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় গত পাঁচ বছরে (২০১৬-২০) মোট কর্মসংস্থানের লক্ষ্য ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ। এর মধ্যে দেশীয় ১ কোটি ৯ লাখ ও বিদেশি ২০ লাখ কর্মসংস্থান সৃজনের লক্ষ্য ছিল। পাঁচ বছর শেষে অবশ্য লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি, কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে ৯৫ লাখ— এর মধ্যে দেশীয় ৬০ লাখ ও প্রবাসে ৩৫ লাখ। করোনাকালের অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে এবার এনইসি সভায় উঠছে অষ্টম-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। পরিকল্পনায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, করোনাকালে পুরো বিশ্বই অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। তবে পরিকল্পনা থেমে থাকবে না। আমরা অষ্টম-পঞ্চম বার্ষিকী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। মঙ্গলবার আশা করছি এটা পাস হয়ে যাবে। ১ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার মোট কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবো। এর মধ্যে প্রবাসে ৩৫ লাখ। যদি না পারি তাহলে নবম পঞ্চম-বার্ষিক পরিকল্পনায় এটা পূরণ করবো।  

অষ্টম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনায় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।  এই ধারাবাহিকতায় ২১ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২০, ২২ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২২, ২৩ অর্থবছরের ৮ দশমিক ২৯, ২৪ অর্থবছরের ৮ দশমিক ৩২, ২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ ধরে অষ্টম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ৫ দশমিক ২ শতাংশ, ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সবশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নেমে আসবে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।