ঢাকা, রবিবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

কক্সবাজারে শেষ হলো জলকেলি উৎসব

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২২
কক্সবাজারে শেষ হলো জলকেলি উৎসব

কক্সবাজার: নাচ, গানসহ নানা আনন্দ আয়োজনের মধ্য দিয়ে পর্যটন শহর কক্সবাজারে শেষ হয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব মাহা ‘সাংগ্রে পোয়ে’ বা জলকেলি উৎসব।

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) শহরের প্রায় বিশটি প্যান্ডেলে সকাল থেকে মহা আনন্দযজ্ঞের পর সন্ধ্যায় এ উৎসবের শেষ হয়।

তবে বুধবার (২০ এপ্রিল) কক্সবাজারের চৌফলদণ্ডী রাখাইন পাড়ায় এ উৎসবের আয়োজন হচ্ছে বলে জানান আয়োজকরা।

রাখাইন নববর্ষকে বরণে প্রতিবছর কক্সবাজারে ঐতিহ্যবাহী ‘সাংগ্রেং পোয়ে’ বা জলকেলি উৎসবের আয়োজন করে থাকে রাখাইন সম্প্রদায়। করোনা মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধ থাকায় এ বছর উৎসবে ছিল বাড়তি আনন্দ।

এর আগে গত রোববার বিকেলে কক্সবাজার শহরের পেশকার পাড়া প্যান্ডেলে জলকেলি উৎসবের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিভীষণ কান্তি দাশ।

রাখাইনদের নতুন বর্ষ ১৩৮৪ মগি বা রাখাইন সাল। রাখাইনদের ভাষায় বর্ষবরণের এই উৎসবকে বলা হয় ‘সাংগ্রেং পোয়ে’। সাংগ্রেং পোয়ে বা জলকেলি আবার কারো কারো ভাষায় মৈত্রীর পানিবর্ষণ।

কক্সবাজার শহরের পূর্ব মাছ বাজার, পশ্চিম মাছ বাজার, ফুলবাগ সড়ক, ক্যাং পাড়া, হাঙরপাড়া, টেকপাড়া, বার্মিজ স্কুল রোড, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক ও চাউল বাজার এলাকায় প্রায় বিশটি মণ্ডপছাড়াও জেলার মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়া, হারবাং, রামু, চৌফলদণ্ডীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এ আয়োজন হয়েছে।

প্রতি বছর এই সময়টার জন্য আমরা মুখিয়ে থাকি। এর মধ্য গত দুবছর মহামারির কারণে উৎসব হয়নি। তাই এবারে উৎসবে আনন্দটা বেশি এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন ড. আছিং রাখাইন।

তিনি বলেন, এটি রাখাইনদের ধর্মীয় কোনো উৎসব নয়, সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব। পুরোনোকে বিদায়, নতুনকে বরণের জন্যই মূলত এ আয়োজন।

রাখাইন তরুণ উশিবু ও কেংগ্রী রাখাইন জানান, আদিকাল থেকে রাখাইন সম্প্রদায় নববর্ষ উপলক্ষে সাংগ্রে পোয়ে উৎসবে মাতছে। এ সময় একে অপরের শরীরে পানি ছিঠিয়ে পুরোনো দিনের সব ব্যথা, বেদনা, হিংসা বিদ্বেষ ভুলে নতুনের প্রত্যাশায় জেগে উঠি।

কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মং এ খেন রাখাইন বলেন, বিশ্বব্যাপী যে করোনা মহামারি বা দুর্যোগ চলছে আমরা চাই এ উৎসবের মঙ্গল জল ছিটানোর মধ্য দিয়ে সব অশুভ শক্তি পৃথিবী থেকে দূরীভূত হবে। পুরোনো বা অশুভকে পেছনে ফেলে আসবে মঙ্গলের বারতা।
 
তিনি বলেন, রাখাইন সম্প্রদায়ের জলকেলি বা সাংগ্রেং পোয়ে উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কক্সবাজার শহরের আছিমং পেশকার পাড়ায় আয়োজন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় উৎসবের প্যান্ডেল। এছাড়াও জেলার সদরসহ রামু, টেকনাফ, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া উপজেলার রাখাইন পল্লীগুলোর অন্তত অর্ধশতাধিক প্যান্ডেলে এই উৎসব পালিত হচ্ছে। এসব প্যান্ডেলে উৎসব আয়োজনে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ জলকেলি ছাড়াও রাখাইন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনারও আয়োজনও ছিল উৎসবে। যোগ করেন মং এ খেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, রাখাইনদের জলকেলি উৎসব উপলক্ষে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে ছিল।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২২
এসবি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।